শ্রীরামকৃষ্ণ কি সত্যিই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ?

2
শ্রীরামকৃষ্ণ কি সত্যিই ইসলাম ধর্মমতে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন ?

শ্রীরামকৃষ্ণ কি সত্যিই ইসলাম ধর্মমতে সিদ্ধিলাভ
 করেছিলেন ? 

"যত মত, তত পথ"                                                                                        --শ্রীরামকৃষ্ণ

এই উক্তিটির ভুল ব্যাখ্যার ব্যাপারে স্বামীজি যথা সময়ে কিছু মূর্খ সন্যাসীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন  "যে মাত্র একদিন গিরগিটি দেখে, সে গিরগিটির মাত্র একটা রঙই জানে । কিন্তু যে গাছে গিরগিটি বাস করে সেই গাছের তলায় যে বাস করে, সে গিরগিটির সব রঙই জানে । তাই যারা ঠাকুরকে(রামকৃষ্ণদেব) দিনের পর দিন, বছরের পর বছর খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন, এক মাত্র তাদেরই ঠাকুরের সম্বন্ধে কিছু লেখার অধিকার আছে । কিন্তু কে কার কথা শোনে । যে আদর্শকে সামনে রেখে স্বামীজি রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেছেন, আজ রামকৃষ্ণ মিশনের সাধুরাই স্বামীজীর সেই আদর্শকে পূর্ণরূপে পদদলিত করছে । 

কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের এই উক্তিটির দোহাই দিয়েই কিছু নির্বোধ মিশনারীর দল এবং জ্ঞানপাপী শ্রীমৎ স্বামী  সারদানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণকে নিয়ে একটি ভূতের গল্প সৃষ্টি করল, যে রামকৃষ্ণ তিন দিন আল্লামন্ত্র জপ করে এক জ্যোতির্ময় দিব্যপুরুষের(আল্লার) দেখা পান এবং ইসলাম ধর্মমতে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন ।

প্রখ্যাত সম্পাদক স্বামী শিবপ্রসাদ ২০০৮ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত 'উদ্ভোদন' পত্রিকায় অত্যন্ত উৎফুল্ল চিত্তে রামকৃষ্ণের এই আল্লামন্ত্র জপ ও গোমাংস খাওয়ার ব্যপারটি উল্লেখ করেন । এই কথাগুলো যে একেবারে বানোয়াট এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, সেটি নিয়েই আজকে আলোকপাত করার চেষ্টা করব ।


রামকৃষ্ণের আল্লামন্ত্র জপ এবং আল্লার দেখা পাওয়া ইত্যাদি ছেলে ভোলানো গল্প না মুসলমানরা বিশ্বাস করবে আর না তো বুদ্ধিদীপ্ত(মেকি অবশ্যই নয়) হিন্দুরা । কেন বিশ্বাস করবেনা সেটা বোঝিয়ে দিচ্ছি । 


প্রথমেই মুসলমানদের কথায় আসা যাক । তাদের বিশ্বাস যে আল্লাকে একমাত্র নবীই দেখতে পেয়েছিলেন অন্য কোন মানুষ (সাচ্চা মুসলমান) যদি শত চেষ্টাও করে তবুও তারা সৃষ্টিকর্তার দেখা পাবে না, এককথায় এটি সম্ভব নয় । ইসলাম ধর্মমতে একমাত্র কেয়ামতের দিনই তারা আল্লাকে সচক্ষে দেখতে পাবে । আর শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন একজন পৌত্তলিক । সুতরাং রামকৃষ্ণের এই যে আল্লার দেখা পাওয়া, এটিকে নিয়ে স্যেকুলার হিন্দুরা যতই মাইক বাজিয়ে চিৎকার করুন । মুসলমানদের কখনই বিশ্বাস করাতে পারবেন না । এটি একদম নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ।


শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতে শ্রীম্ উদ্ধৃত করেছেন "গোবিন্দ রায়ের কাছে আল্লামন্ত্র নিলাম । এ বিষয়ে বিশিষ্ট জ্ঞানী হিন্দুদের মত, ইসলামে আল্লামন্ত্র বলে কিছু নেই । তাদের সিদ্ধবাক্য একটাই সেটি হলো "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ" । শ্রীরামকৃষ্ণ যদি আল্লামন্ত্র জপ এবং গো-মাংস ভক্ষন করতেন তাহলে তার প্রিয় শিষ্যদের(বিবেকানন্দ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ ইত্যাদি ) নিকট অবশ্যই প্রকাশ করতেন । আর দক্ষিনেশ্বরের কাছে এক মন্দিরে যে রামকৃষ্ণ নামাজ পড়তে যেতেন এরও কোন প্রামাণিক তথ্যভিত্তি নেই । 

৩০.৫.২০১১ তারিখে কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'স্বস্তিকা' পত্রিকায়(২৭/১, বিধান সরণি, কলকাতা ৬) বয়োবৃদ্ধ সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ 'শ্রীরামকৃষ্ণের নামাজ পড়া' শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছেন "শ্রীরামকৃষ্ণ যখন নামাজ পড়তেন--- বিষয়টি আমার জানা ছিল । তবে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাইনি । বয়শ আশি পেরিয়েছে । কখন যে টেসে যাব । তাই মনে হল, এবার মুখ খোলা উচিৎ । ....শ্রীরামকৃষ্ণের মুখে বসানো(ঐ সময় আল্লামন্ত্র জপ, ইত্যাদি) কথাগুলি একেবারে বানানো । কারন অনেক...। ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতি অমুসলিমদের কাছে অত্যন্ত জটিল । নামাজ পড়া আরও জটিল । .... অমুসলিমদের এসব রপ্ত করা দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ এবং তাকে সব শিখতে হলে মসজিদে অন্যান্যদের পাশে দীর্ঘ পাঁচবার(ত্রিসন্ধা নয়) দাড়ানো এবং পূর্বকথিত পদ্ধতি অনুসরন করা দরকার ।


কাজেই এবার আপনাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা যে শ্রীরামকৃষ্ণের আল্লামন্ত্র জপ, ইসলামের পথে সিদ্ধিলাভ এবং আল্লার দেখা পাওয়া একেবারে বানানো । শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্তদের মধ্যে অভেদানন্দ ও সারদানন্দের মতো কিছু দালালতত্বে বিশ্বাসী লোকজনও ছিল । আর তারা নিজেদের নামের সাথে অমুক আনন্দ লাগিয়ে সাধুবেশে হিন্দুদের বহু ক্ষতিসাধন করে গেছে ।


স্বামী বিবেকানন্দ ঐ সময় ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ভারতীয় আধ্যাত্মবাদ প্রকাশ করে বিশ্বখ্যাত হয়েছিলেন । কিন্তু এরা বিখ্যাত হতে পারলেন না । তাই এই জ্ঞানপাপীরা স্যেকুলার নীতি অনুসরণ করলেন । বিখ্যাত হবার জন্য ।  

হোক না নিজ ধর্মের ক্ষতি । তাতে কি এসে যায় । আগে নিজের নাম ইতিহাসে তুলি ! ঠিক আমাদের মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর মতো । তাই না ?

তাই আজ সমস্ত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্য করে বলছি । নিজধর্ম ধ্বংসকারী সাধু নামের আত্মঘাতী বোমার থেকে সাবধান । ঠিক এই কারনেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন :   

 "সংসারে সাধু-অসাধুর মধ্যে প্রভেদ এই যে, সাধুরা কপট আর অসাধুরা অকপট।"


আরও পড়ুন

হিন্দুধর্ম এবং বেদ সম্পর্কে বিখ্যাত মনীষীদের বাণী/অভিমত

হিন্দুদের কেন নামের পূর্বে বাবু শব্দ বসানো উচিৎ নয়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top