মন্ত্র কি? মন্ত্র কত প্রকার? জানুন মন্ত্র নিয়ে বিস্তারিত

0

মন্ত্র কি? কত প্রকার?

মন্ত্র নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে আমাদের প্রথমেই জানতে হবে বস্তুত মন্ত্র কি ! মন্ত্র সম্বন্ধে ওঝা, পন্ডিত, সাধু, সন্ত বা তান্ত্রিকের অজানা কিছু নেই । অবশ্যই যদি সত্যিকারের সাধক হন । কিন্তু যেহেতু আমাদের উদ্দেশ্য ভারতের এই প্রাচীন অলৌকিক বিষয়টি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করানো । তাই আমাদের আলোচনার প্রেক্ষিতটাকে আমরা চাই প্রাথমিক স্তরে নিয়ে যেতে । এতে সাধারণ মানুষ যেমন বিষয়টির গভীরে যেতে পারবেন তেমনি ভন্ড সাধু-সন্ত, সন্ন্যাসী আর তান্ত্রিকদের দ্বারা প্রতারিত হওয়া থেকেও রক্ষা পাবেন ।


মন্ত্র নিয়ে বিস্তারিত


প্রথমে আমরা মন্ত্র নিয়ে আলোচনা করব । তাই আমাদের গোড়াতেই জানতে হবে মন্ত্র কি ? মন্ত্রের পরিভাষা কি ? মন্ত্রের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নানা জনে নানান মত ব্যক্ত করেছেন । সব ক্ষেত্রেই যে সে সব ব্যাখ্যা বা মত বিজ্ঞান সম্মত হয়েছে তা নয় । কখনও কখনও সে সব ব্যাখ্যাকে অবাস্তব বলেও মনে হবে । আমরা যেহেতু আলোচনাটিকে সাধারণ মানুষের বোধগম্যতার মধ্যে আনার চেষ্টা করব, তাই বিভিন্ন সূত্র থেকে মন্ত্র সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা, মন্ত্রের যে অর্থ সংগ্রহ করতে পেরেছি তার সবই উল্লেখ করব । এতে আর যাই হোক মন্ত্র বিষয়টিকে বোঝার সুবিধা হবে । নিচে ক্রমানুসারে মন্ত্র সম্পর্কিত ব্যাখ্যাগুলি উল্লেখ করা হলো । 

[ এক ]

মন্ত্র বস্তুত দু অক্ষরের শব্দ হলেও এর মধ্যে অনেক অর্থের ব্যঞ্জনা রয়েছে । অল্প কথায় মন্ত্র কি তা বলা খুব শক্ত । বেদের সুক্তির ছন্দ থেকে শুরু করে দেব-দেবীর স্তুতি, আরাধনা, যাগ-যজ্ঞ ইত্যাদি বিশেষভাবে ব্যাবহৃত নির্দিষ্ট শব্দ -বিধান পর্যন্ত সবকিছুকেই মন্ত্র বলে অবিহিত করা চলে ।

[ দুই ]

যে শক্তি বা প্রেরণা ধর্ম এবং মোক্ষ প্রাপ্তির সহায়ক, সেই শক্তিকেও মন্ত্র বলা যেতে পারে ।

[ তিন ]

কোনও বিশেষ বর্ণসমূহ, যদি বিশেষ ক্ষমতা প্রদর্শন করে বা প্রভাব দেখিয়ে কোন সাধক বা প্রতিসাধকের বাঞ্ছিত ফল লাভের সহায়ক হয়, অর্থাৎ ঐ বর্ণসমূহ তাদের বাঞ্ছিত ফল প্রদান করে তাহলে তাকে মন্ত্র বলা যেতে পারে  ।

[ চার ]

জগতে গুপ্ত শক্তিকে জাগ্রত করে স্বীয় অনুকূল করে তোলার বিদ্যাও মন্ত্র । এ ধরনের বিদ্যাকে আমরা অবশ্যই মন্ত্র বলে অবিহিত করতে পারি ।

[ পাঁচ ]

দেব-দেবীদের সূক্ষ্ম শরীর, আরাধ্য বা ইষ্টদেবতার কৃপাকেও মন্ত্র বলা হয়ে থাকে । দিব্য-শক্তি প্রাপ্তিতে যে শব্দ বা শব্দ সমষ্টি প্রযুক্ত হয় সেই বা সেই সব শব্দকেও মন্ত্র বলা হয়ে থাকে ।

[ ছয় ]

যে বিদ্যা গুপ্ত শক্তিকে বিকশিত বা আরও উন্নত করে সেই বিদ্যাকেও মন্ত্র বলে ।

[ সাত ]

নিশ্চিত বা নির্দিষ্ট শব্দ সমূহের দ্বারা উচ্চারণ করা বিশেষ ধ্বনিকেও মন্ত্র বলা যেতে পারে । যারা ধ্বনি বিশেষজ্ঞ তারা এই ধ্বনিকে বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডের সংক্ষিপ্ত রূপ বলে মত ব্যক্ত করেছেন । ধ্বনির মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিচিত্র শক্তি, প্রলয়(সংহার), এবং সৃজনের(প্রসার) কাজ করার সময় তা সূক্ষ্ম হয় । বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এটা সত্যি যে ধ্বনি বিশেষের প্রভাব মানুষ, পশু-পাখি, জীব-জন্তুর ওপর তো পড়েই এমনকি গাছ-গাছালির উপরও পড়ে ।


মন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ

এবারে খুব অল্প কথায় মন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করব । এটা খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন যে, মন্ত্রের উদ্ভব হয় কবে আর এর রচনাকারই বা কে ? এই অতি জরুরি প্রশ্নগুলির কিন্তু আজও সঠিক জবাব পাওয়া যায় না । তবে এটা ধরে নেওয়াই যায় যে মন্ত্রের রচয়িতা প্রাচীন কালের মুনি-ঋষিরা । অন্যদিকে ঋক বেদকে যদি আর্য জাতির প্রাচীনতম গ্রন্থ বলে মেনে নেওয়া হয় তাহলে একথা বলা যেতেই পারে যে, যেহেতু এতে উল্লিখিত যুক্তি ইত্যাদি মন্ত্রেরই বিকশিত রূপ সেহেতু মন্ত্রের রচনাকাল বেদেরও আগে । শুধু ঋক বেদই নয় যজু, সাম বা অথর্ব বেদের মধ্যেও প্রচুর পরিমাণে মন্ত্র অতি বিকশিত রূপে হাজির দেখতে পাই । অন্যান্য গ্রন্থ যেমন : সংহিতা, আরণ্যক, উপনিষদ সন্দেহ নেই, বেদ পরবর্তী রচনা । সুতরাং এগুলিতে মন্ত্রের উন্নত রূপ পাওয়া আশ্চর্যের কিছু নয় । বিশ্বে এমনও কোন দেশ বা জাতি নেই যে দেশে এর চর্চা হয় না বা সেখানকার একাংশের মানুষ এ বিষয়ে জ্ঞান রাখেন না । মন্ত্রের শক্তির বিষয়ে অবহিত নয় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার । 


     কিন্তু আজকাল আধুনিকতার চরম ক্ষণে এই প্রাচীন বিদ্যার প্রভাব প্রতিপত্তি যেন অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে । কলিযুগের শুরুতে এই বিদ্যার প্রভূত উন্নতি হয়েছিল । তখন মুনি-ঋষিরা এই বিদ্যা কঠোর অনুশীলন ও সাধনার মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন । তারাই একে চরম উৎকর্ষতা দান করেছিলেন । মুনি-ঋষিদের পরের ধাপে সিদ্ধ সাধকদের এবং অধস্তন পুরুষদের সাদর যত্নে এই প্রাচীন বিদ্যা যথেষ্ট লালিত হয় । আজকের দিনে এই বিদ্যার প্রভাব বা বিদ্বানের এত অভাব যে তাদের বিশেষ করে প্রকৃত বিদ্বানদের খুঁজে পাওয়া মুশকিল । কিন্তু তবুও আশার কথা এই যে এই বিদ্যার জনপ্রিয়তা বা তার শক্তির ব্যাপ্তি কিছু মাত্র কম হয় নি । আজও মানুষ লেখাপড়া, রাজনীতি, খেলাধুলা, ব্যাবসা, বিদেশ যাত্রা, নির্বাচন, বিশেষ-বিশেষ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে তান্ত্রিকের সাহায্য নেন । সবচেয়ে বড় কথা পূজা-পাঠ, শ্রাদ্ধ-শান্তি, বিবাহ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি নানা কাজে কর্মে মন্ত্রজ্ঞানীদের প্রয়োজন কিছু মাত্র কমেনি বরং তা অনেক বেড়েছে । 
কিছুকাল আগেও আমাদের ভারতে তন্ত্র-মন্ত্র ইত্যাদির যথেষ্ট প্রচলন ও ব্যবহার ছিল । রমরমা ছিল ক্ষমতাধর তান্ত্রিক যোগী বা সাধু মহাত্মাদের দ্বারাও । বহু সময় এরা নানা অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে সকলকে চমকে দিয়েছেন । তাদের অনেক অনেক কান্ড কারখানা আমরা পুঁথি পত্রে দেখতে পাই । "ভারতের সাধক" একটি মূল্যবান গ্রন্থ । এই গ্রন্থে ভারতের বহু সাধকের আশ্চর্য ক্ষমতার কথা তথ্য প্রমাণ সহ উল্লেখ করা হয়েছে । এটা একটা বিদ্যা যে এক্ষেত্রে জাতিভেদ করা হয়নি । যে চেয়েছে, সেই -ই শ্রদ্ধা, সাধনা আর দীর্ঘ অনুশীলনের মাধ্যমে তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে । আজ প্রতিপত্তি কিছুটা ম্লান হলেও এবং সংখ্যায় কম হলেও একেবারে শেষ হয়ে যায় নি । অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত সাধক, সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরেও থেকে যান । তবে প্রকৃত সাধকের সংখ্যা কিন্তু আজ সত্যিই খুব কম, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই । অর্থাৎ অল্প কথায় বলতে গেলে বলতেই হয়, বিদ্যা আছে বিদ্বান নেই, তন্ত্র আছে তান্ত্রিক নেই, মন্ত্র আছে মন্ত্রের ধারক নেই । 
পরিশেষে বলতে চাই জ্যোতিষশাস্ত্র এবং মন্ত্রের সাধনা নিছক কল্পনা নয় । এর যথেষ্ট অনুশীলন করলেই এর ফল পাওয়া যায় ।

কিছুকাল আগেও আমাদের ভারতে তন্ত্র-মন্ত্র ইত্যাদির যথেষ্ট প্রচলন ও ব্যবহার ছিল । রমরমা ছিল ক্ষমতাধর তান্ত্রিক যোগী বা সাধু মহাত্মাদের দ্বারাও । বহু সময় এরা নানা অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে সকলকে চমকে দিয়েছেন । তাদের অনেক অনেক কান্ড কারখানা আমরা পুঁথি পত্রে দেখতে পাই । "ভারতের সাধক" একটি মূল্যবান গ্রন্থ । এই গ্রন্থে ভারতের বহু সাধকের আশ্চর্য ক্ষমতার কথা তথ্য প্রমাণ সহ উল্লেখ করা হয়েছে । এটা একটা বিদ্যা যে এক্ষেত্রে জাতিভেদ করা হয়নি । যে চেয়েছে, সেই -ই শ্রদ্ধা, সাধনা আর দীর্ঘ অনুশীলনের মাধ্যমে তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে । আজ প্রতিপত্তি কিছুটা ম্লান হলেও এবং সংখ্যায় কম হলেও একেবারে শেষ হয়ে যায় নি । অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত সাধক, সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরেও থেকে যান । তবে প্রকৃত সাধকের সংখ্যা কিন্তু আজ সত্যিই খুব কম, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই । অর্থাৎ অল্প কথায় বলতে গেলে বলতেই হয়, বিদ্যা আছে বিদ্বান নেই, তন্ত্র আছে তান্ত্রিক নেই, মন্ত্র আছে মন্ত্রের ধারক নেই । 
পরিশেষে বলতে চাই জ্যোতিষশাস্ত্র এবং মন্ত্রের সাধনা নিছক কল্পনা নয় । এর যথেষ্ট অনুশীলন করলেই এর ফল পাওয়া যায় ।


আরও পড়ুন

*পুরোহিত এবং ব্রাহ্মণের পার্থক্য
*হিন্দুধর্ম এবং বেদ সম্পর্কে বিখ্যাত মনীষীদের বাণী
*স্বপ্নে কি দেখলে কি ফলাফল লাভ হয়
*অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত
*নবী মুহাম্মদের চাচা উমর-বিন-হাসনাব কর্তৃক ভারতের প্রশংসা এবং মহাদেবের স্তব
*নমস্কার কেন করা হয় ?
*আদ্যশ্রাদ্ধ নিয়ে বিস্তারিত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top