প্রতিমা কেন বিসর্জন দেওয়া হয় ?

1
প্রতিমা কেন বিসর্জন দেওয়া হয় ?

হিন্দুরা কেন প্রতিমা বিসর্জন করে

বহু মুসলিম দুর্গাপূজার সময় আপনাকে হয়তো একটা প্রশ্ন বারবার করে থাকে, যে তোমরা লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে মূর্তি বানিয়ে তাকে পূজা করে আবার বিসর্জন দিয়ে দাও কেন ? আপনার কাছে তখন জবাব দেওয়ার মতো কোন উত্তরই থাকে না । তো কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার প্রকৃত কারণ ।

অনেকেই আমাদের প্রতিমা বিসর্জনের ব্যাপারটা বঝুতে পারেন না । এটা কেন করা হয় বা এর কি মাহাত্ম ? সনাতন ধর্মীয় ভাবধারা সবসময়ই উচ্চমার্গীয় চিন্তাধারা । যা অতি সাধারণ মানষের পক্ষে বােঝা বড় মুশকিল । আরাে সমস্যা হলাে সংস্কৃত ভাষা খুবই উচ্চমার্গের ভাষা । যা সহজবােধ্য নয় এবং বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এর উপলব্ধি ও ব্যাখ্যা করেন ।


আরও জানুন :

আদ্যশ্রাদ্ধ কি এবং কেন পালন করা হয় ?

নমস্কার শব্দের প্রকৃত অর্থ কি ?

অশৌচ কি এবং কেন পালনীয় ?

হিন্দুদের নিত্য প্রয়োজনীয় মন্ত্রসমূহ


প্রথমেই বলে রাখি যে হিন্দুধর্মে কোন রকম প্রকৃতি বিরুদ্ধ আচার-আচরণকে সমর্থন করে না । আর সমর্থন করবেই বা কেন । হিন্দুধর্মের সৃষ্টিই হয়েছে প্রকৃতি থেকে । সুতরাং বিসর্জনেরও একটা প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা রয়েছে ।

সাধারণ মানুষ মনে করেন হিন্দুরা পাঁচদিন যাবৎ বহু টাকা-পয়সা ব্যয় করে পূজা করে আবার এটাকে জলে ফেলে দেয়, এটা কেমন উৎসব ? আমরা এর এক সংক্ষিপ্ত সাধারণ ব্যাখ্যা দিচ্ছি ।

প্রতিমা বিসর্জনের প্রকৃত অর্থ

পঞ্চভূতে তৈরি এই মানবদেহের প্রতিকী হিসেবেই আমরা প্রতিমা তৈরি করি । অর্থাৎ নিরাকার ঈশ্বরকে উপাসনার নিমত্তে তাকে সাকার রূপ প্রদান করা হয় । নিরাকার ঈশ্বরকে উপাসনা করার থেকে সাকার উপাসনা করা সাধারণ মানুষের পক্ষে অনেকটা সহজ । তাই আমরা প্রতিমার মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে ঈশ্বরজ্ঞানে পূজা করি ।  তাই স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন :

"পুতুল পূজা করে না হিন্দু, কাঠ মাটি দিয়ে গড়া

মৃণ্ময়ী মাঝে চিন্ময়ী হেরে, হয়ে যায় আত্মহারা"

হিন্দুশাস্ত্রমতে মানুষের দেহ পাঁচটি উপাদান বা পঞ্চমহাভূত দ্বারা গঠিত । এগুলো যথাক্রমে ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম । অর্থাৎ মাটি, জল, আগুন, বায়ু আর আকাশ । তাই হিন্দুধর্মে এই দেহ মৃত্যুর পর দাহ করা হয় । অর্থাৎ প্রকৃতি দ্বারা তৈরি দেহ আবার প্রকৃতিতেই মিশে যায় ।

এই পৃথিবীর কোনকিছুই চিরস্থায়ী নয় । অর্থাৎ জন্ম নিলে তার মৃত্যু অনিবার্য । এটাই প্রকৃতিসমর্থিত শ্বাশ্বত নিয়ম । সুতরাং যাকে আবাহন করা হয় তাকে বিসর্জন দেওয়া প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ নয় । এটা প্রকৃতি সমর্থিত । তাই ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে এটা পূজার জিনিস এটা জলে ফেলে দেওয়া মনে হবে । কিন্তু উচ্চমার্গীয় চিন্তাধারায় হলো ব্রহ্ম- ব্রহ্মে লয় প্রাপ্ত হওয়া বা প্রকৃতি তার কৃতকর্ম শেষ করে আবার প্রকৃতির উপাদানে মিশে যাওয়া ।

মিত্রগণ

শরৎকাল আরম্ভ হয়ে গেছে, আজ ৩ ই আশ্বিন।।

সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা

৩ ই আশ্বিন, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top