যোগিনী একাদশী মাহাত্ম্য

3
যোগিনী একাদশী মাহাত্ম্য

যোগিনী একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ সংবাদরূপে বর্ণিত আছে ।

যুধিষ্ঠির বললেন-হে বাসুদেব ! আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর মাহাত্ন্য সম্পর্কে কৃপাপূর্বক আমাকে বলুন । শ্রীকৃষ্ণ বললেন-হে মহারাজ ! সকল পাপবিনাশিনী ও মুক্তিপ্রদ এই উত্তম ব্রতের কথা বলছি, আপনি শ্রবণ করুন । আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশী ‘যােগিনী’ নামে খ্যাত । মহাপাপ নাশকারী এই তিথি ভবসাগরে পতিত মানুষের উদ্ধার লাভের একমাত্র নৌকাস্বরূপ । ব্রত পালনকারীদের পক্ষে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রত বলে প্রসিদ্ধ । এই প্রসঙ্গে আপনাকে একটি পৌরাণিক কাহিনী বলছি ।

অলকা নগরে শিবভক্ত পরায়ণ কুবের নামে এক রাজা ছিল । তিনি প্রত্যহ শিবপূজা করতেন । তার হেমমালী নামে একজন মালী ছিল । প্রতিদিন শিব পূজার জন্য মানস সরােবর থেকে সে ফুল তুলে যক্ষরাজ কুবেরকে দিত । বিশালাক্ষী নামে হেমমালীর এক পরমা রূপবতী পত্নী ছিল । সে তার সুন্দরী পত্নীর প্রতি অত্যন্ত আসক্ত ছিল । একদিন সে তার স্ত্রীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়ল । রাজভবনে যাওয়ার কথাও ভুলে গেল । বেলা দুই প্রহর অতীত হল । অর্চনের সময় চলে যাচ্ছে দেখে রাজা ক্রুদ্ধ হলেন ।

মালীর বিলম্বের কারণ অনুসন্ধানে এক দূত প্রেরণ করলেন । দূত এসে রাজাকে বলল—সে গৃহে স্ত্রীর সাথে আনন্দে মত্ত । দূতের কথা শুনে কুবের অত্যন্ত রেগে তখনি মালীকে তার সামনে হাজির করতে আদেশ দিল । এদিকে মালী কুবেরের পূজার সময় অতিবাহিত হয়েছে বুঝতে পেরে অত্যন্ত ভয় পেল । তাই স্নান না করেই সে রাজার কাছে উপস্থিত হল ।

তাকে দেখামাত্র রাজা ক্রোধবশে চোখ রাঙিয়ে বললেন—রে পাপিষ্ঠ, দুরাচার ! তুই দেবপূজার পুষ্প আনতে অবজ্ঞা করেছিস তাই আমি তােকে অভিশাপ দিচ্ছি তুই শ্বেতকুষ্ঠগ্রস্থ হয়ে যা এবং তাের প্রিয়তমা ভার্যার সাথে তাের চিরবিয়ােগ সংগঠিত হােক । রে নীচ, তুই এখনি এই স্থান থেকে ভ্রষ্ট হয়ে অধোগতি লাভ কর ।

কুবেরের এই অভিশাপে হেমমালী পত্নীর সাথে স্বর্গভ্রষ্ট হয়ে দীর্ঘকাল যাবৎ কুষ্ঠরােগ ভােগ করতে লাগল । রােগের যন্ত্রণায় দিন অথবা রাত্রে কখনই সে সুখ পেত না । এভাবে শীত গ্রীষ্মে প্রচণ্ড বেদনায় বহুকষ্টে সে জীবনযাপন করতে লাগল । কিন্তু দীর্ঘদিন মহাদেবের অর্চনের ফুল সংগ্রহের সুকৃতি ফলে সে শাপগ্রস্ত হয়েও সে পরমেশ্বর শিব কর্তৃক  বিস্মরিত কখনও হয়নি ।

একদিন হেমমালী ভ্রমণ করতে করতে হিমালয়ে মার্কণ্ডেয় ঋষির আশ্রমে উপস্থিত হল । কুষ্ঠরােগে পীড়িত সপত্নী হেমমালীকে দর্শন করে শ্রীমার্কণ্ডেয় তাকে জিজ্ঞাসা করলেন 'তুমি কার অভিশাপে এইরকম নিন্দনীয় কুষ্ঠরােগগ্রস্ত হয়েছ?' সে উত্তর দিল—“হে মুনিবর । রাজা ধনকুবেরের আমি ভূত্য ছিলাম । আমার নাম হেমমালী । আমি প্রত্যহ মানস সরোবর থেকে ফুল তুলে শিব পূজার জন্য রাজকে দিতাম । কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে একদিন স্ত্রীর মনােরঞ্জন হেতু কামাসক্ত হওয়ায় সেই ফুল তে বিলম্ব হয় । রাজার অভিশাপে এইরকম দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছি । পরোপকারই সাধুগণের স্বাভাবিক কর্ম । হে ঋষিশ্রেষ্ঠ । আমি অত্যন্ত অপরাধী । কৃপা করে আমার প্রতি প্রসন্ন হােন ।

তখন মার্কণ্ডেয় মুনি বললেন—হে মালী । তােমার মঙ্গলের জন্য শুভফল প্রদানকারী এক ব্রতের উপদেশ করছি । তুমি আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের ‘যােগিনী’ নামক একাদশী ব্রত পালন কর । এই ব্রতের পুণ্য প্রভাবে তুমি অবশ্যই কুষ্ঠব্যাধি থেকে মুক্ত হবে ।

আরো জানুনঃ মহালয়া কেন পালন করা হয় ?

শ্রীকৃষ্ণ বললেন—ঋষির উপদেশ শ্রবণ করে হেমমালী তাকে প্রণাম জানাল । পরে অত্যন্ত আনন্দে ঋষির আদেশমতাে নিষ্ঠার সাথে যােগিনী একাদশী ব্রত পালন করল । এইভাবে হেমমালী সমস্ত রােগ থেকে মুক্ত হল ও পত্নীসহ সুখে জীবনযাপন করতে লাগল ।

হে মহারাজ যুধিষ্ঠির ! আমি আপনার কাছে এই ব্রত উপবাসের মহিমা কীর্তন করলাম । এই ব্রত পালনে আট হাজার ব্রাহ্মণকে ভােজন করানাের ফল লাভ হয় । যে ব্যক্তি এই মহাপাপ বিনাশকারী ও পুন্যফল প্রদায়ী যােগিনী একাদশীর কথা পাঠ এবং শ্রবণ করে সে অচিরেই সর্বপাপ থেকে মুক্ত হবে ।

বিঃদ্রঃ আর্টিকেলটি একাদশী মাহাত্ম্য পুস্তিকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ।


আরো কিছু প্রবন্ধ

শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুকে কি হত্যা করা হয়েছিল ?

দুর্গা প্রতিমায় কেন পতিতালয়ের মাটি লাগে ?

হিন্দু ধর্ম ধ্বংসের কারণ !

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top