ধ্রুবের উপাখ্যান

1
ধ্রুবের উপাখ্যান

ধ্রুবের উপাখ্যান ।

অনেক অনেককাল আগের কথা । উত্তানপাদ নামে এক রাজা ছিলেন । তার ছিল দুই রানী । বড় রানী সুনীতি, ছােট রানী সুরুচি। সুনীতির ছেলে ধ্রুব । আর সুরুচির ছেলে উত্তম ।

সুরুচিকে রাজা বেশি ভালােবাসতেন । তাই সুরুচির ছেলে বলে উত্তম খুব আদর পেত । ধ্রুব তেমন আদর পেত না । রাজপুরীর একপাশে ছেলে ধ্রুবকে নিয়ে থাকতেন সুনীতি । দুঃখে কষ্টে দিন কাটত তাঁর ।

একদিন উত্তম বাবার কোলে বসে আছে । তখন ধ্রুব সেখানে এসে উপস্থিত হল । ভাইকে বাবার কোলে দেখতে পেয়ে । সেও বাবার কোলে উঠতে চাইল । সুরুচি দূর থেকে তা দেখে এক দৌড়ে সেখানে চলে এল । বাধা দিল তাকে । ধ্রুবের খুব দুঃখ হল । সে মনের দুঃখে মায়ের কাছে ছুটে গেল। মাকে বলল সব কথা ।

সুনীতি ছেলেকে আদর করে বললেন,

-বাবা, তুমি এক মনে হরিকে ডাক । ডাকার মতাে ডাকলে, তিনি সাড়া দেবেন । তিনিই তােমার দুঃখ দূর করে দেবেন । শান্ত হল ধুব । তারপর রাজপুরী ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল হরির সন্ধানে । একমনে হরিকে ডেকে চলেছে ধুব । ঘুরতে ঘুরতে সে এক গভীর বনে এসে পড়ল । যাকে দেখে তাকেই হরি মনে করে । হরি নামের এমন মহিমা, বনের পশুও তাতে হিংসা ভুলে যায় ।

ধ্রুবের আকুল প্রার্থনায় শ্রীহরি সন্তুষ্ট হলেন, তিনি পাঠিয়ে দিলেন দেবর্ষি নারদকে । নারদ ধ্রুবর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,

তােমার কী চাই বৎস?

-আমি পৃথিবীর কিছুই চাই না, চাই শ্রীহরির শ্রীচরণ । কী করলে শ্রীহরির দেখা পাব, আমাকে তা বলুন প্রভু । নারদ তাকে হরির আরাধনার বিষয়ে অনেক কিছু শিখিয়ে দিলেন । কালিন্দী নদী তীরে বসে ধুব শ্রীহরির সাধনা করতে লাগল । ধ্রুবের কঠোর সাধনায় শ্রীহরি সন্তুষ্ট হলেন । তিনি এসে ধ্রুবকে বললেন-

-আমি এসেছি ধ্রুব ।

-পদ্মপলাশলােচন শ্রীহরি, এসেছ, এসেছ তুমি ।

ধ্রুব ভক্তিভরে শ্রীহরির শ্রীপাদপদ্মে প্রণাম করল ।

শ্রীহরি বললেন-

বৎস, বালক হয়েও তুমি কঠোর সাধনা করেছ । তােমার মায়ের পুণ্যে তােমার হৃদয়ে জাগ্রত হয়েছে ভক্তি । আর তার ফলে তুমি সাধনায় সিদ্ধ হলে । ধ্রুব পরে ফিরে গেল রাজপুরীতে । উত্তানপাদ ধ্রুবকেই রাজপদে অভিষিক্ত করলেন । মৃত্যুর পর ধ্রুবের স্থান হয়েছিল ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ স্থান ধ্রুবলােকে ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top