শ্রীকৃষ্ণ কি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ বন্ধ রেখে অর্জুনকে গীতাজ্ঞান দিয়েছিলেন ?

1

শ্রীকৃষ্ণ কি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ বন্ধ রেখে অর্জুনকে গীতাজ্ঞান দিয়েছিলেন ?

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে কিভাবে এতো কোলাহলপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে গীতাজ্ঞান দান করেছিলেন ?

শ্রীকৃষ্ণ পরম যােগেশ্বর, ভগবান । আমরা পার্থিব সীমিত জ্ঞান-বুদ্ধির মানুষ । স্বভাবতঃই প্রশ্ন আসে শ্রীমদ্ভগবদগীতার কথােপকথনে অর্জুনের ৮৫টি আর ভগবানের ৫৭৪টি শ্লোক (ধৃতরাষ্ট্র আর সঞ্জয়ের (১ + ৪০) ৪১টি শ্লোক না হয় না-ই ধরলাম) সাধারণভাবে পড়লেও ১০ সেকেন্ড করে ৫৭৪০ সেকেন্ড অর্থাৎ দু' ঘণ্টা সময়ের প্রয়ােজন । তবে কি কুরু ও পাণ্ডব-পক্ষীয় সেনাগণ যুদ্ধের মাঠে এই দু' ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলেন যুদ্ধ বন্ধ করে ?

এ প্রশ্নের মুলে রয়েছে সংশয় ; যুদ্ধ শুরু হবার আগে এত কথা আর বিশ্বরূপদর্শনের (১১শ অধ্যায়ের) ভয়ংকর দৃশ্য পরম্পরা দর্শন কি করে সম্ভব হ’ল ? হ’লই বা, তখন কি যুদ্ধ বন্ধ ছিল ? লক্ষ লক্ষ সৈন্য নিরবে পুতুলের মত এত দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে কি করছিল ? এই যে সময়ের কথা, এটিই এখানে প্রধান । কুরুক্ষেত্র প্রাঙ্গণে যারা দাঁড়িয়েছিলেন তারা শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন থেকে কতদূরে তখন ছিলেন সেটাই এখানে বিবেচ্য । যােগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ আর সমধর্মা যােগী অর্জুন । তখন যােগবলে পরস্পর অতি নিকটে মহাকর্ষ বলতে, আর কুরুক্ষেত্রে দণ্ডায়মান অন্যান্য যুযুৎসুগণ সে বিন্দু = অনেক দূরে । মহাকর্ষের কাছে থাকলে সময় অপেক্ষাকৃত হন ধীরে চলে, আর মহাকর্ষ বিন্দু থেকে যত দূরে যাওয়া যায় । সময় তত দ্রুত চলে । অতএব ৫৭৪টি শ্লোকের কথােপকথন তা কপ দর্শন মহাকর্ষ বিন্দুতে আমাদের তুলনায় অনেক কম সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব ।

একেই আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, 'Gravitational time dilation' অর্থাৎ মহাকর্ষীয় সময় বিস্তার নব্যাপ্তি । এর ফলে আমাদের পৃথিবীর তুলনায় অনেক কম সময়ে । অগ্নিবীর অনেক কথা বা কাজ মহাকর্ষ-বিন্দুতে শেষ করা যায়। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ১৪ ঘণ্টায় সূর্যের উদয়-অস্ত দেখে যারা দিনক্ষণ গণনা করেন, তারা অল্পদর্শী । এই কালের মাত্রায় সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যগের পরিমাণ ৪,৩২০,০০০ বছর । কিন্তু এরূপ চারযুগের ১০০০ বছর অতিক্রান্ত হলে ব্রহ্মার ১ দিন, আরাে ১০০০ বার অতিক্রান্ত হলে তার ১ রাত হয় । যিনি এরূপ দিনরাত্র অতিক্রম হতে দেখেন তিনিই প্রকৃত অহােরাত্রবিদ (৮/১৭) । তাহলে এই সময়ের স্কেলে ঐ ৬৪৫ টি শ্লোক বিনিময় বা বিশ্বরূপদর্শনে যােগেশ্বর ভগবান আর তার সমধর্মা যােগী অর্জুনের যােগবলে মহাকর্ষ বিন্দুতে অবস্থান করে সম্পাদন করতে আমাদের তুলনায় কত কম সময় লেগেছে । তাই কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ বন্ধ করে নয়, মাত্র কয়েক মূহুর্তে এই গীতার উপদেশ দেওয়া সম্ভব হয়েছিল । সময়ের যে মাত্রা বা স্কেলে অর্জুন-শ্রীকৃষ্ণ কথােপকথন করেছেন তা সাধারণ সময়ের মাত্রার অনেকগুণ বেশী । তাই পৃথিবীর সময়ের মাপকাঠিতে গীতার শ্লোকগুলাে পঠন দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ মনে হলেও যুদ্ধপূর্ব উত্তেজনা থাকতে থাকতেই প্রত্যাবৃত হয়ে পার্থিব স্তরে যুদ্ধে ব্রতী হওয়া মােটেই অসম্ভব ছিল না । সবচেয়ে বড় কথা, কয়েক দণ্ডের অনুশাসনে একজন আত্মীয় এবং সমধর্মা ভক্তকে কোনও মহাপুরুষ প্রকৃতিস্থ করবেন-এটা আশ্চর্যের কিছু নয় ।

Post a Comment

1 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Post a Comment
To Top