অম্বুবাচী কি এবং কেন পালন করা হয় ?

4

অম্বুবাচী কি এবং কেন পালন করা হয় ?

Table Of Content (toc)

অম্বুবাচী কী এবং কেন ?

Ambubachi 2025

আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের তৃতীয় পাদ অতীত হলে চতুর্থ পাদে আর্দ্রা নক্ষত্রের প্রথম পাদের মধ‍্যে ধরিত্রীদেবী ঋতুমতী হন । এই  সময়কে অম্বুবাচী বলে । আবার ঠিক এই একই সময়ে অসমের নীলাচল পাহাড়ে যোনিরূপা মহামায়া কামাখ‍‍্যাও ঋতুমতী হন । এই সময় তিনদিন দেবী মন্দির বন্ধ থাকে । তিন দিন গত হলে দেবী মন্দির খোলা হয় এবং দেবীর স্নান ও পূজার্চনা শেষে ভক্তদের দেবী দর্শন করতে দেওয়া হয় । 

সাধারণত ৬ই বা ৭ই আষাঢ় থেকে ১০ই বা ১১ই আষাঢ় পর্যন্ত এই যোগ থাকে ।

অম্বুবাচী যোগের জগন্মাতা কামাখ‍্যার রক্তবস্ত্র দেহে ধারণ করলে অভীষ্ট ফললাভ হয়ে থাকে । তাছাড়া ওই রক্তবস্ত্র ধারণ করে যে কোনো স্থানে জপ, পূজা করলেও সাধক এর সাধনা পূর্ন হয় ।

অম্বুবাচী শব্দের অর্থ

অম্বুবাচী কথাটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ 'অম্ব' ও 'বাচি' থেকে ।  'অম্ব' শব্দের অর্থ হলো জল এবং 'বাচি' শব্দের অর্থ হলো বৃদ্ধি । অতএব গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহের পর যখন বর্ষার আগমনে ধরিত্রী সিক্ত হয় এবং নবরূপে বীজধারণের যোগ্য হয়ে ওঠে সেই সময়কেই বলা হয় অম্বুবাচী ৷

হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া, ধর্মকৃত্য বা লৌকিক আচার উদযাপিত হয় যেমন বিভিন্ন ব্রত । আমাদের মধ্যে অম্বুবাচী নিয়ে অনেকরই মনে প্রশ্ন আছে । অম্বুবাচী বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অমাবতি নামেও পরিচিত ।

আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে পৃথিবীকে মাতৃস্থানীয় বলা হয় । বেদে এই রকমই বলা হয়েছে তিনি আমাদের মা । পৌরাণিক যুগেও পৃথিবীকে ধরিত্রী মাতা বলা হত । তাহলে দেখা যাচ্ছে পৃথিবী আমাদের মা, কারণ সেখানেই আমাদের জন্ম, শুধু আমাদের কেন- ফুল, পাখি, প্রকৃতি এক কথায় সবাই আমরা পৃথিবীর সন্তান ।

আরো জানুনঃ দোলপূর্ণিমা কি এবং কেন পালন করা হয় ?

মহাজাগতিক ধারায় পৃথিবী যখন সূর্যের মিথুন রাশিস্থ আদ্রা নক্ষত্রে অবস্থান করে সেদিন থেকে বর্ষাকাল শুরু ধরা হয় । আমরা জানি মেয়েদের ঋতুকাল বা রজঃস্বলা হয় এবং একজন নারী তারপরই সন্তান ধারণে সক্ষম হন । ঠিক তেমনি প্রতিবছর অম্বুবাচীর এই তিনদিনকে পৃথিবীর ঋতুকাল ধরা হয় । এর সাথে প্রাচীন কৃষি ব্যবস্থা জড়িয়ে আছে । এই তিন দিন জমিতে কোন চাষ করা হয় না । বর্ষায় সিক্ত পৃথিবী নতুন বছরে নতুন ফসল উৎপাদনের উপযোগী হয় ।

উর্বরতা কেন্দ্রিক কৃষিধারায় নারী এবং ধরিত্রী সমার্থক বলে গণ্য করা হয় । আষাঢ় মাসের শুরুতে পৃথিবী বা বসুমতি মাতা যখন বর্ষার নতুন জলে সিক্ত হয়ে ওঠে তখন তাকে ঋতুমতি নারী রূপে গণ্য করা হয় এবং শুরু হয় অম্বুবাচী প্রবৃত্তি, তার ঠিক তিন দিন পরে সেটা শেষ হয়, সেটা হল অম্ববুচি নিবৃত্তি । এই নিবৃত্তির পরই প্রাচীন কালে জমি চাষ করত কৃষকেরা । এখনও বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ম রক্ষা হয় । ভারতের বিভিন্ন জায়গাতে এটা রজোৎসব নামেও পালিত হয় । আসামের কামরূপে কামাখ্যা দেবীর মন্দির এই তিনদিন বন্ধ থাকে ।

আমাদের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ঋতুকালে মেয়েরা অশুচি থাকে এবং সে সময় তারা মাঙ্গলিক কর্ম থেকেও বিরত থাকেন । একইভাবে পৃথিবী এই অম্বুবাচী বা অমাবতির তিন দিন অশুচি থাকে বলে চিন্তা করা হয়ে থাকে । এ সময় যারা ব্রহ্মচর্য পালন করেন যেমন : ব্রহ্মচারী, সাধু,সন্ন্যাসী, যোগীপুরুষ, বিধবা মহিলা (সেই সব বিধবা মহিলা যারা ব্রহ্মচর্য পালন করেন) আমিষ গ্রহণ করেন না, নিরামিষ খান তারা এরা কেউই রজঃস্বলা পৃথিবীর উপর আগুনের রান্না কিছু খান না । বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে থাকেন এই তিন দিন । প্রতি বছর আষাঢ় এর ৭ তারিখে এটা শুরু হয় এবং ১০ তারিখে শেষ হয় । এটা আসলে হিন্দুদের একটা লৌকিক আচার ।

এই আচারের মূল্য এই যে হিন্দু চিন্তা্বিদগণ কিছু বিশেষ নিয়ম ও আচারের মাধ্যমে সমাজের জীবনব্যবস্থায় একটি উন্নত আবহাওয়া ও জলবায়ুগত চিন্তার উপহার দিয়েছেন ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

4 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top