ইন্দিরা একাদশী মাহাত্ম্য

0
ইন্দিরা একাদশী মাহাত্ম্য

ইন্দিরা একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য

ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির বললেন- হে মধুসূদন ! আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর কি নাম তা কৃপা করে বলুন ।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে রাজন ! আশ্বিন মাসের একাদশী ‘ইন্দিরা’ নামে পরিচিত । এই ব্রত প্রভাবে মহাপাপ বিনষ্ট হয় । এমনকি কর্মবিপাকে যারা নিম্নযোনি লঅভ করেছেন, সেই পূর্বপুরুষদেরও উত্তম গতি লাভ হয় । 

এই একাদশীর মহাত্ম্য শোনামাত্রই সামবেদীর যজ্ঞফল প্রাপ্ত হওয়া যায় । হে রাজন ! মাহিস্মতি নগরে ইন্দ্রসেন নামে এক প্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন । ধর্মবিধি অনুসারে রাজ্য পালনে তিনি বিশেষ খ্যাতিসম্পন্ন ছিলেন । তার বিপুল ধনসম্পত্তি ছিল । পুত্র-পৌত্রাদিসহ তিনি সুখে রাজ্য পরিচালনা করতেন ।

আরো জানুনঃ মহালয়া কি এবং কেন পালন করা হয় ?

বিষ্ণুভক্তি পরায়ণ সেই রাজা নিরন্তর শ্রীগোবিন্দ নামগানে মগ্ন থাকতেন । একদিন রাজা সুখে রাজসভায় বসে আছেন । এমন সময় দেবর্ষি নারদ স্বর্গ থেকে সেখানে এলেন । তাঁকে দর্শন করে রাজা হাত জোড় করে উঠে দাঁড়ালেন । দন্ডবৎ প্রণাম করে মুনিকে আসন, পাদ্য, অর্ঘ্য আদি ষোড়শোপচারে পূজা নিবেদন করলেন। তারপর বললেন- হে মুনিবর !

আপনার দর্শনমাত্র আমার যাবতীয় যজ্ঞফল লাভ হয়েছে । এখন আপনার আগমনের কারণ জানিয়ে আমাকে কৃতার্থ করুন । দেবর্ষি নারদ বললেন- হে মহারাজ ! অতি বিস্ময়কর এক কথা শ্রবণ করুন । আমি একসময় যমলোকে গিয়েছিলাম । সেখানে যমরাজের সভায় বহু পুণ্যকারী আপনার পিতাকে দেখলাম । ব্রতভঙ্গ পাপে তাকে সেখানে যেতে হয়েছে ।


হে রাজন ! আপনার পিতা যে সংবাদ প্রেরণ করেছেন, আমি এখন তা আপনাকে বলছি । তিনি বললেন- ‘হে ঋষিবর ! মাহিস্মতির ইন্দ্রসেন রাজা আমার পুত্র । তাকে বলবেন যে, আমি বহু পুণ্য অনুষ্ঠান করলেও কোন কারণবশত যমালয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি । আপনি কৃপা করে তাকে সর্বপাপনাশক আন্দিরা একাদশী ব্রত পালন করতে বলবেন । সেই ব্রত প্রভাবে আমি নিষ্পাপ হয়ে স্বর্গলোকে যেতে সমর্থ হব ।’ এই কথা জানাবার জন্যই আমার আগমন ।

হে রাজন ! আপনার পিতার মঙ্গলবিধানে আপনি যথাবিধি আন্দিরা ব্রত পালন করুন । রাজা জিজ্ঞাসা করলেন- হে দেবর্ষি ! সেই ইন্দিরা ব্রতের বিধি কি, কোন তিথি বা কোন পক্ষে এই একাদশী ব্রত করা কর্তব্য, তা কৃপা করে আমাকে বলুন ।

দেবর্ষি উত্তর দিলেন- হে মহারাজ ! আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষে দশমীর দিন শ্রদ্ধাসহকারে প্রাতঃস্নান করবেন, মধ্যাহ্নে ভক্তিভাবাপন্ন হয়ে পুনরায় স্নান করবেন এবং রাত্রিকালে ভূমিতে শয়ন করবেন । পরদিন একাদশীতে প্রাতঃকৃত্যাদি সমাপন করে নিরাহারে থাকবেন । ব্রতের নিয়মাবলী দৃঢ়ভাবে পালন করবেন ।

‘হে পুন্ডরীকাক্ষ ! হে অচ্যুত ! এ শরণাগতের প্রতি কৃপা করুন’ । এভাবে শ্রদ্ধা সহকারে শালগ্রাম পূজা করে পিতার উদ্দেশ্যে ব্রতের ফল অর্পণ করবেন । দ্বাদশীর দিন সকালে ভক্তিভরে শ্রীগোবিন্দের পূজা করে ব্রহ্মণ ভোজন করিয়ে অবশেষে নিজে মহাপ্রসাদ গ্রহণ করবেন । 

হে রাজন ! বিধি অনুসারে শ্রীহরি এবং ভক্তদের অর্চন করলে আপনার পিতৃবর্গ মুক্তিলাভ করে শীঘ্রই বৈকুণ্ঠে গমন করবেন । রাজাকে এই উপদেশ দিয়ে দেবর্ষি নারদ প্রস্থান করলেন । রাজা ইন্দ্রসেন মুনিবরের উপদেশ অনুসারে পুত্রপরিজনসহ ভক্তিসহকারে এই ইন্দিরা ব্রতের অনুষ্ঠান করলেন । তখন দেবলোক থেকে পুষ্পবৃষ্টি হতে রাগল এবং তার পিতাও বিষ্ণুলোকে গমন করলেন ।

তারপর রাজা ইন্দ্রসেন নিজপুত্রকে রাজ্যভার অর্পণ করে নিজেও বিষ্ণলোকে ফিরে গেলেন । এইি ইন্দিরা একাদশীর মহাত্ম্য পাঠে ও শ্রবণে মানুষ সকল পাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে ফিরে গেলেন । এই ইন্দিরা একাদশীর মাহাত্ম্য পাঠে ও শ্রবণে মানুষ সকল পাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হয় ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top