গীতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

0

গীতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

গীতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

গীতার ৪র্থ অধ্যায়ের ১ নং শ্লোকে বলা আছে,
“ইমং বিবস্বতে যোগং প্রোক্তবানহমব্যয়ম।।
বিবস্বান্মনবে প্রাহ মনুরিক্ষবাকবেহব্রবীৎ।।”
-এখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, আমি এই অব্যয় জ্ঞানযোগ সূর্যদেব বিবস্বানকে বলেছিলাম। সূর্য তা মনুকে বলেছিলেন এবং মনু ইক্ষবাকুকে বলেছিলো ।
এরপর ২ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ যা বলেছেন তার বাংলা হলো-
এই ভাবে পরম্পরার মাধ্যমে এই পরম বিজ্ঞান রাজর্ষিগণ এই জ্ঞান লাভ করেছিলেন। কিন্তু কালের প্রবাহে পরম্পরা ছিন্ন হয়েছিলো এবং এই সেই জ্ঞান নষ্ট প্রায় হয়েছে ।
এরপর ৩ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
সেই সনাতন যোগ আজ আমি তোমাকে বললাম ।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে বিশ্বাস করা হয় যে- মনু এর নাম থেকেই মানব বা মানুষ শব্দের উৎপত্তি এবং এই মনু ( Monu) শব্দের অপভ্রংশ থেকেই ইংরেজির Man শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ মানুষ । ফলে মনু যে মানবজাতির জনক তাতে কোনো সন্দেহ নেই, এই মনুর পিতা বিবস্বানকে শ্রীকৃষ্ণ গীতার জ্ঞান প্রথম দিয়েছিলেন, ফলে গীতার জ্ঞান যে পৃথিবীতে মানবসভ্যতার শুরু থেকেই আছে, সেটা ঐতিহাসিকভাবেই প্রমাণিত । কিন্তু মাঝখানে এই জ্ঞান কিছুটা নষ্ট হয়ে এর বিশুদ্ধতা হারিয়ে ফেলে এবং এ কারণেই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে এই জ্ঞান আবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে দেন । সুতরাং গীতার জ্ঞান যে সভ্যতার শুরু থেকেই আছে, সেটা কিন্তু এখানে স্পষ্ট। এছাড়াও বৈদিক সাহিত্যের ইতিহাস এ ব্যাপারে বলছে-
“বর্তমানে এটিকে কৃষ্ণদ্বৈপায়ণরচিত প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্য মহাভারত-এর একটি অংশ হিসেবে পাওয়া গেলেও মহাভারতের পূর্ব থেকেই গীতা একটি স্বতন্ত্র ধর্মগ্রন্থ তথা একটি পৃথক উপনিষদ হিসেবে অস্তিত্বশীল ছিলো ।“
মহাভারতের পূর্বে এই গীতার নাম ছিলো গীতোপনিষদ, তো মহাভারতের পূর্বে তো কৃষ্ণই ছিলো না, তাহলে গীতা এলো কোথা থেকে । এখন গীতার ৪র্থ অধ্যায়ের ১ নং শ্লোকের কথা স্মরণ করুন যেখানে শ্রীকৃষ্ণ বলছে, এই জ্ঞান আমি সূর্যদেবকে দিয়েছিলাম, মাঝখানে পরম্পরা হারিয়ে এটা নষ্ট প্রায় হয়েছে । এই নষ্ট প্রায় গীতা ই ছিলো গীতোপনিষদ। কিন্তু ব্যাসদেব মহাভারত রচনাকালে যখন নতুন করে গীতার বাণী তার মধ্যে সংযোজন করতে পারেন, তখন সেই পুরোনো গীতোপনিষদের আর প্রয়োজন না থাকায় এমনি ই তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে ।

গীতা সম্পর্কে উইকিপিডিয়ায় বলা আছে, এটি খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ থেকে ৫০০ অব্দের মধ্যে রচনা । এই হিসেবে গীতার বয়য়স দাঁড়ায় ২৪০০/২৫০০ বছর, কিন্তু উইকি চালায় ইউরোপীয় খ্রিষ্টানরা, যাদের উদ্দেশ্য সনাতনী সভ্যতাকে ছোট করে দেখানো, যে কারণে সনাতনী সভ্যতার অনেক আবিষ্কারকে তারা অন্যদের বলে দাবী করে, যেমন- তারা বলে বছরকে ৩৬৫ দিনে প্রথম ভাগ করেছিলো মিশরীয়রা, যেটা মাত্র ৫ হাজার বছরের পুরোনো সভ্যতা । কিন্তু এদের বহুপূর্বে রামায়ণ রচনা করা হয়েছিলো, যেখানে স্পষ্ট করে বছরকে ১২ মাসে এবং মাসকে দিনে ভাগ করা আছে, তাহলে- দিন, সপ্তাহ, মাস, বছরের হিসেব কিভাবে মিশরীয়দের আবিষ্কার হয় ? এভাবে ইউরোপীয় খ্রিষ্টানরা সিন্ধু ও আর্যসভ্যতার বহু আবিষ্কারের কৃতিত্ব অন্যদেরকে প্রদান করে এবং সনাতনী সভ্যতাকে ছোট করে দেখায়, যাতে সনাতনীরা তাদের ইতিহাস নিয়ে গৌরবান্বিত হতে না পারে এবং তারা খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়ে যায়। তাদের প্রচেষ্টা যে একেবারে বিফলে গিয়েছিলো, সেটা বলা যাবে না, মাইকেল মধুসূদন দত্তের সময় মাইকেল সহ অনেক হিন্দু যুবকই খ্রিষ্টানদের এই ষড়যন্ত্রে বলি হয়ে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান হয়ে গিয়েছিলো, একারণে উইকি যা বলে, সেটাকে একেবারে বিশ্বাস করার কোনো প্রয়োজন নেই, উইকিপিডিয়া প্রদত্ত তথ্য জানার পর সেগুলো যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে তারপর সেগুলো গ্রহণ করতে হবে ।

এছাড়াও গীতার জ্ঞান যে কোনোভাবেই বিকৃত হয় নি, তার প্রমাণ গীতার মধ্যেই আছে, খেয়াল করুন গীতার ৪/১ নং শ্লোকের কথা, যেখানে বলা আছে “এই অব্যয় জ্ঞানযোগ”, অব্যয় তো সেটাই, যার কোনো ব্যয় বা ক্ষয় নেই । গীতার বিপরীতে সনাতন ধর্মের সকল গ্রন্থ কোনো না কোনো ভাবে বিকৃত বা প্রক্ষিপ্ত, যে কারণে আমি বলি- গীতা ছাড়া সনাতন ধর্মের সকল গ্রন্থ বিকৃত বা প্রক্ষিপ্ত ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top