বেদ ও গীতায় কি মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ ?

0

 

বেদ ও গীতায় কি মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ ?

বেদ ও গীতায় কি মূর্তিপূজার কথা বলা আছে ?

বেদে সরাসরি মূর্তিপূজার কথা বলা আছে নিচের এই মন্ত্রে-

“হে অগ্নি, ইন্দ্র, বরুণ মিত্র দেবগন, তোমরা আমাদের বল প্রদান করুন, অথবা মরুৎগন বা বিষ্ণু এ বল প্রদান করুন। নাসত্যদ্বয় রুদ্র, দেবগনের পত্নীগণ, পূষা, ভগ ও সরস্বতী আমাদের পূজায় প্রসন্ন হন ।”- (ঋগ্বেদ, ৫/৪৬/২)
এছাড়াও ধর্ম হচ্ছে কিছু তত্ত্ব বা থিয়োরির সমষ্টি, এই থিয়োরি বিবেচনায় সনাতন ধর্মের প্রধান গ্রন্থ হচ্ছে গীতা, যা মহাভারতের অন্তর্ভূক্ত এবং যা বেদসংকলক বেদব্যাসের হাতেই রচিত। যে গীতা সরাসরি পরমেশ্বর শ্রীকৃ্ষ্ণের মুখনিসৃত, সেই গীতায় বলা হয়েছে-
"যে যে ভক্ত ভক্তিযুক্ত হইয়া যে যে দেবমূর্তি অর্চনা করিতে ইচ্ছা করে, আমি সেই সকল ভক্তের সেই সেই দেবমূর্তিতে ভক্তি অচলা করিয়া দিই।"- (গীতা, ৭/২১)
-খেয়াল করুন, এখানে বলা হয়েছে, "যে যে ভক্ত ভক্তিযুক্ত হইয়া যে যে দেবমূর্তি অর্চনা করিতে ইচ্ছা করে," অর্চনা মানে দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে পূ্জা বা আরাধনা, দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে ভক্তের সেই পূজা বা আরাধনা যে ঈশ্বর কর্তৃক স্বীকৃত, সেটা কিন্তু এই শ্লোকেই শ্রীকৃষ্ণ বলে দিয়েছেন এই কথা বলে যে- "আমি সেই সকল ভক্তের সেই সেই দেবমূর্তিতে ভক্তি অচলা করিয়া দিই ।"
শুধু তাই নয় দেব-দেবীর পূজা করে মানুষ তার কাম্যবস্তু লাভ করে থাকে এবং সেই কাম্যবস্তু স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণই প্রদান করে থাকেন, যে কথা শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন গীতার এই শ্লোকে-
"সেই ভক্তি নিয়া সে সেই দেবমূর্তির অর্চনা করিয়া থাকে এবং সেই দেবতার নিকট হইতে নিজ কাম্যবস্তু লাভ করিয়া থাকে, প্রকৃতপক্ষে আমিই সেই কামনা পূরণ করিয়া থাকি ।"-(গীতা, ৭/২২)
-তাহলে সনাতন ধর্মে মূর্তিপূজার কথা থাকলো না কিভাবে ? বেদ- সনাতন ধর্মের আদি বা ভিত্তিগ্রন্থ এবং গীতা সনাতন ধর্মের প্রধান গ্রন্থ এবং এগুলোতে স্পষ্ট করে বলা আছে, দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে পূজা বা আরাধনা ঈশ্বর কর্তৃক স্বীকৃত এবং কোনো দেব-দেবীর কাছে পূজা প্রার্থনার মাধ্যমে কোনো ভক্ত যা লাভ করে, তা ঈশ্বরই প্রদান করেন। এ থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, কোনো দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে পূজা প্রার্থনা অনর্থক বা ব্যর্থ নয় এবং মানুষ যেহেতু সব সময় তাদের কাম্যবস্তু পেতে চায় এবং সেই কাম্যবস্তু লাভের উপায় হিসেবে তারা দেব-দেবীর পূজাও করতে পারে, যেটা গীতা কর্তৃক স্বীকৃত ।
এছাড়াও গীতার ৯/২৩ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, "হে অর্জুন, যাঁহারা শ্রদ্ধা করিয়া অন্য দেবতার পূজা করে, তাঁহারা আমারই পূজা করে ।"
-এই তথ্য থেকেও প্রমাণিত যে সনাতন ধর্মে দেব-দেবীদের পূজা স্বীকৃত ।
সনাতন ধর্ম পালনের চরম উদ্দেশ্যে- ইসলাম ধর্মের মতো শুধু স্বর্গ পাওয়া নয়, ঈশ্বরকে পাওয়া । সেই ঈশ্বরকে পাওয়ার উপায় যে তার উদ্দেশ্যে পূজা প্রার্থনা, সেটা বলা আছে গীতার ৯/২৫ নং শ্লোকে এভাবে-
"আমার অর্চনা করিলে ভক্তরা আমাকেই পান ।"
আগেই বলেছি অর্চনা মানে দেবতাদের উদ্দেশ্যে পূজা বা প্রার্থনা। আর শ্রীকৃষ্ণই যে সর্বপ্রধান দেবতা, সে কথা গীতার ১০/১৫ এবং ১১/৪৩,৪৫ শ্লোকেই স্পষ্ট করে বলা আছে এবং সেই শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতে সরাসরি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গীতার ১৮/৬৫ নং শ্লোকে এভাবে-
"তুমি একমাত্র আমাতেই মন দাও, আমাকে ভক্তি করো, আমাকে পূজা করো, আমাকে নমস্কার করো ।"
সনাতন ধর্মে ঈশ্বর নিরাকার হয়েও সাকার এবং সকল দিক দিয়ে এটা প্রমাণিত যে গীতা সনাতন ধর্মের প্রধান গ্রন্থ এবং সেই গ্রন্থে স্পষ্ট করে বলা আছে দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে পূজার কথা, তাহলে সনাতন বা হিন্দু ধর্মে মূর্তি পূজার করার কথা থাকলো না কোথায় ?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top