ভগবান পরশুরাম সম্পর্কে ৬ টি অজানা তথ্য

3

ভগবান পরশুরাম সম্পর্কে ৬ টি অজানা তথ্য
ভগবান পরশুরাম

Table Of Content (toc)

6 Unknown Facts about Lord Parashuram

পরশুরাম, যাকে King Of Martial Art অর্থাৎ অস্ত্রবিদ্যার জনক বলা হয় । বলা হয়ে থাকে তার মাধ্যমেই ভারতবর্ষে উচ্চতর ধনুর্বিদ্যার প্রচলন ঘটেছিল ! হিন্দুপুরাণে মাত্র হাতেগোনা কয়েকজন অতি মহারথী শ্রেণির যোদ্ধা পাওয়া যায় । যার মধ্যে ভগবান পরশুরাম একজন!

যোদ্ধা রাজকুমারী রেণুকা এবং ব্রাহ্মণ ঋষি জমদগ্নিরসপ্তর্ষিদের মধ্যে একজন ) পুত্র ছিলেন পরশুরাম, পরশুরাম ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার । তিনি ছিলেন ঋষি দম্পতির পঞ্চম পুত্র এবং তার নাম ছিল রামভদ্র । ( রাম, যিনি দয়াময় ) ।

আপনি যদি রামায়ণ এবং মহাভারত পড়ে থাকেন বা দেখে থাকেন তবে আপনি ইতিমধ্যেই জানেন যে পরশুরাম হিন্দু পুরাণের অন্যতম সেরা যোদ্ধা ।


ভগবান পরশুরাম সম্পর্কে ৬ টি অজানা তথ্য

1. পরশুরাম নামের অর্থ

পরশুরাম শব্দটি দুটি শব্দ পরশু এবং রাম থেকে পরশু শব্দের অর্থ 'কুড়াল' এবং 'রাম' শব্দের অর্থ দয়াময় ।

তার অন্যান্য নাম :

রামভদ্র - করুণাময় রাম

ভার্গব - ভৃগুর বংশধর

ভৃগুপতি - ভৃগু বংশের প্রভু

ভৃগুবংশী – যিনি ভৃগু বংশের অন্তর্গত

জমদগ্ন্য - জমদগ্নির পুত্র

আরো জানুনঃ মহাভারতের যে যোদ্ধা এখনো জীবিত !


2. শিব ধনুক ( পিনাক ) এবং পরশুরাম | রাম ও পরশুরামের যুদ্ধ

পরশুরামের দর্প চূর্ণ করেছিলেন রামচন্দ্র !

রামায়ণ অনুসারে, ভগবান পরশুরাম ভগবান রামের প্রতি বিরক্ত ছিলেন , কারণ রাম তার গুরু, ভগবান শিবের ধনুকটি ( পিনাক ) ভেঙে দিয়েছিলেন । ক্রুদ্ধ পরশুরাম, ভগবান রামকে শারাঙ্গ ( ভগবান বিষ্ণুর ধনুক  ) দিয়েছিলেন এবং তার সাথে যুদ্ধ করার জন্য আহ্বান করেছিলেন ।

রাম পরশুরামের কাছ থেকে নেওয়া ধনুকের মধ্যে বৈষ্ণব অস্ত্র যোজনা করে, ঋষিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, " এই মারাত্মক তীরটি আমি কোথায় ছাড়ব ? যেহেতু আপনি আমার বয়োজ্যেষ্ঠ এবং ঋষি, সেইহেতু আমি আপনার উপর  প্রহার করতে পারি না ।

মুগ্ধ ও বিস্মিত পরশুরাম, তখন রামচন্দ্রের এইরূপ শিষ্টাচার দেখে তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলেন যে  তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রামচন্দ্র কোনো সাধারণ ক্ষত্রিয় নন । পরশুরাম বললেন, আপনি অবশ্যই স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু হবেন । আমি পরাজয় মেনে নিলাম, কিন্তু আমি লজ্জিত নই কারণ আপনি সত্যই সমস্ত জগতের অধিপতি ।

আপনি ইতিমধ্যে আমার সমস্ত ক্ষমতা এবং আমার অহংকার থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করেছেন । দয়া করে আমার স্বর্গীয় সুখের কামনার উপর এই বাণটি প্রয়োগ করুন এবং সেগুলিকে পুড়িয়ে ভস্ম করুন ।

আরো পড়ুনঃ মহাভারতের শ্রেষ্ঠ ১০ জন যোদ্ধার তালিকা


3. পরশুরাম অমর - চিরঞ্জীবী !

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ও কাহিনী অনুসারে অনেক অমর রয়েছে । সংস্কৃতে চিরঞ্জীবী মানে দীর্ঘজীবী ব্যক্তি , চির (মানে দীর্ঘ), এবং জীবী (মানে বেঁচে থাকা) । শব্দটি অমর বা অমরত্ব নামেও পরিচিত ।

পরশুরামকে আট চিরঞ্জীবীর একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় । যিনি  সত্যযুগ থেকে কলিযুগ পর্যন্ত পৃথিবীতে বসবাস করছেন ! ভগবান পরশুরামকে মহাভারত এবং রামায়ণ দুইটি মহাকাব্যেই দেখা যায় । দুটি ভিন্ন যুগের ঘটনা, ত্রেতাযুগে রামায়ণ এবং দ্বাপরে মহাভারত । তিনি কলিযুগে পুনরায় আবির্ভূত হবেন ভগবান কল্কিকে অস্ত্র বিদ্যা দান করতে ।

ভগবান পরশুরাম সম্পর্কে ৬ টি অজানা তথ্য

বিষ্ণু পুরাণ অনুসারে, তিনি স্বয়ং ভগবান শিবের দ্বারা অস্ত্রবিদ্যায় প্রশিক্ষিত হয়েছিলেন এবং রুদ্রমশা (স্বয়ং ভগবান শিবের উপাদান ) দিয়ে দীক্ষিত হয়েছিলেন । যারা রুদ্রমশা পেয়েছে তাদের হত্যা করতে পারে একমাত্র শিব নিজেই । এই কারণেই তিনি অমর, এবং কল্কনুসারে, তিনি কলিযুগে ভগবান কল্কিকে অস্ত্র বিদ্যায় পারদর্শী করার জন্য পুনরায় আবির্ভূত হবেন ।

আরো পড়ুনঃ রামায়ণের সেরা ১০ জন যোদ্ধার তালিকা


4. পরশুরাম সহস্রবাহু/১০০০ হাতযুক্ত কার্তবীর্যার্জুনকে হত্যা করেছিলেন !

পরশুরামের ক্ষত্রিয়দের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়ার কারণ ছিলেন রাজা কার্তবীর্জ অর্জুন

"ঋষি জমদগ্নির কাছে ভগবান ইন্দ্র দ্বারা উপহার দেওয়া একটি ঐশ্বরিক গাভী ছিল, যা কয়েক মুহুর্তের মধ্যে বহু সংখ্যক মানুষের জন্য সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা করতে পারত । ক্ষত্রিয় রাজা কার্তবীর্য অর্জুন তার আশ্রম থেকে সেই গরু চুরি করেছিলেন । গরু উদ্ধারের জন্য পরশুরাম কার্তবীর্যকে হত্যা করেন । প্রতিশোধ নিতে রাজা কার্তবীর্যের পুত্র ঋষি জমদগ্নিকে হত্যা করেন । সেই সময়ে ক্ষত্রিয়রা নৃশংস হয়ে উঠছিল । তাই, পরশুরাম পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য তার সময়ের পাপিষ্ঠ ক্ষত্রিয়দের ধ্বংস করার ব্রত নিয়েছিলেন এবং তিনি ২১ বার, হ্যা ২১ বার পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রিয় করেছিলেন । সেই সময় কিছু ক্ষত্রিয় রাজক্ষমতা ত্যাগ করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল ।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, বলরাম, কংস, উগ্রসেন, বসুদেব, সাত্যকি, হৃদিক, কৃতবর্মা, প্রদ্যুম্ন, সাম্ব এবং অনিরুদ্ধ প্রমুখ রাজা কার্তবীর্যার্জুনের বংশধর ।

ভগবান পরশুরাম সম্পর্কে ৬ টি অজানা তথ্য
পরশুরাম এবং কার্তবীর্যার্জুনের যুদ্ধ
ছবি : Deviantart.Com

5. পরশুরাম নিজের কুঠার দিয়ে গণেশের দাঁত ভেঙ্গে দিয়েছিলেন

ভগবান পরশুরাম রাজা কার্তবীর্য অর্জুনকে পরাজিত করার পরে তিনি কৈলাশ পর্বতে ভগবান শিবের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন । কিন্তু ভগবান গণেশ তাকে বাধা দেন ।

গনেশের এরূপ ব্যবহার দ্বারা, পরশুরাম ক্ষুব্ধ হন । তাই তিনি প্রভু গণেশের সাথে যুদ্ধ শুরু করবন । যুদ্ধের সময়, পরশুরাম গণেশের দিকে তার মহাশক্তিশালী কুঠার নিক্ষেপ করেন এবং এতে গনেশের একটি দাঁত ভেঙ্গে যায় । গণেশ নিজেকে রক্ষা করেননি কারণ কুঠারটি ছিল তার পিতা শিবের উপহার ।

( দ্রষ্টব্য: ভগবান গণেশের ভাঙা দাঁত সম্পর্কে আরও একটি উপাখ্যান রয়েছে । ঋষি ব্যাস দ্বারা বলা মহাভারত লেখার জন্য গণেশ তার নিজের দাঁত ভেঙেছিলেন )

আরো পড়ুনঃ রথী ও মহারথীর মধ্যে পার্থক্য


6. মহাভারতে পরশুরাম

মহাকাব্য মহাভারতে পরশুরামের উল্লেখ বেশ কয়েকবার পাওয়া যায় । পরশুরাম ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য এবং কর্ণকে যুদ্ধবিদ্যা শিখিয়েছিলেন । তিনি কর্ণকে ব্রহ্মাস্ত্রের জ্ঞানও দিয়েছিলেন । কিন্তু কর্ণ তাকে মিথ্যা বলেছিলেন, তাকে বলেছিলেন যে তিনি একজন ব্রাহ্মণ । তাই তিনি তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে পরশুরাম তাকে যে জ্ঞান দিয়েছিলেন, তা যখন তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে তখন তিনি সেই বিদ্যা ভুলে যাবেন । রাজকন্যা অম্বার বিবাদে পরশুরামকে তার শিষ্য ভীষ্মের সাথে একটি যুদ্ধও করতে হয়েছিল , যেখানে ভীষ্ম পরশুরামকে পরাজিত করেছিলেন ।

আরো জানুনঃ শকুনি মামা সম্পর্কে ৮ টি অজানা তথ্য

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top