রামায়ণের সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা কে ছিলেন ?

2

রামায়ণের সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা কে ছিলেন ?

Table of Content (toc)

রামায়ণের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে ছিলেন ?

রামায়ণের রাম-রাবণের যুদ্ধ ছিল পৌরাণিক ইতিহাসের  অন্যতম ভয়ানক যুদ্ধ । মহাভারতের যুদ্ধে যেখানে মাত্র হাতেগোনা কয়েকজন মহারথীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায় সেখানে রাম-রাবণের যুদ্ধে ২ জন অতিমহারথী এবং প্রায় শতাধিক মহারথী অংশগ্রহণ করেছিল । সুতরাং এই যুদ্ধ যে কতোটা ভয়ানক রূপ ধারণ করেছিল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা ।

আজ আমরা এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেরা ১০ জন যোদ্ধার বিবরণ জানব এবং সেইসাথে কে ছিলেন রামায়ণের সবচেয়ে শক্তিমান যোদ্ধা তাও নির্ণয় করার চেষ্টা করব ।

উল্লেখ্য : এই তালিকায় ভগবান পরশুরাম এবং কার্তবীর্যার্জুনকে রাখা হয়নি । কারণ তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি ।


১০. অঙ্গদ

Class : মহারথী

বালির ভয়ঙ্কর পুত্র অঙ্গদ লঙ্কার মহাবলী যোদ্ধা, রাবণের পুত্র নর্তক এবং রাবণের সেনাবাহিনীর প্রধান মহাপার্শ্বকে হত্যা করেছিলেন । অঙ্গদ এবং তার মায়ের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সুগ্রীবকে তার স্ত্রী সীতাকে খুঁজে পেতে ভগবান রামকে সাহায্য করার জন্য রাজি করানো । যখন তিনি কূটনৈতিক উদ্দেশ্যের জন্য লঙ্কায় প্রেরিত হয়েছিলেন যেখানে তিনি অপমানিত হয়েছিলেন, তখন তিনি রাবনের রাজসভার সদস্যদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন মাটি থেকে তার পা নাড়াতে যেখানে সবাই ব্যর্থ হয়েছিল ।


৯. অতিকায়

Class : মহারথী

অতিকায়, রাবণের পুত্র এবং ইন্দ্রজিতের আরেক মহাশক্তিমান ভ্রাতা । একবার, যখন তিনি কৈলাশ পর্বতে ভগবান শিবকে ক্রুদ্ধ করেছিলেন, তখন মহাদেব তার ঐশ্বরিক ত্রিশূল অতিকায়ের দিকে নিক্ষেপ করেছিলেন । যাইহোক, আতিকায় সে সময় তার হাত দিয়ে  ত্রিশূলাকে ধরে ফেলেন (এটি মহাদেবের ইচ্ছা ব্যাতীত সম্ভব হতো না) এবং পরমেশ্বর ভগবান শিবের নিকট আত্মসমর্পণ করেন । ভগবান শিব তার শিষ্ট ব্যবহার দেখে খুশি হয়েছিলেন এবং আতিকায়কে ধনুর্বিদ্যা এবং ঐশ্বরিক সব অস্ত্রের জ্ঞান প্রদান করেছিলেন । ভগবান ব্রহ্মার একটি অজেয় বর্ম অতিকায়কে দেওয়া হয়েছিল । এই বর্ম ব্রহ্মাস্ত্র ব্যাতীত অন্য কোন অস্ত্র দ্বারা ছেদন করা যেত না । যার কারণে শ্রীলক্ষ্মণ তাকে ব্রহ্মাস্ত্রের ব্যবহারে হত্যা করেছিলেন ।


৮. জাম্ববন

Class : মহারথী

ভাল্লুকের রাজা জাম্ববন ভগবান রামের কাছ থেকে একটি বর পেয়েছিলেন যে তিনি তার শরীরের আকার বৃদ্ধি করতে পারবেন এবং দশ ১০০০০ সিংহের শক্তি থাকবে তার শরীরে । তিনি হনুমানকে তার বিশাল ক্ষমতা উপলব্ধি করান এবং লঙ্কায় সীতাকে খুঁজতে তাকে সমুদ্র জুড়ে উড়ে যেতে উৎসাহিত করেন । রাম-রাবণের যুদ্ধের বহুবছর  পর, মহাভারতের সময়ে তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে একটি কঠিন দ্বন্দ্বযুদ্ধ করেছিলেন । প্রায় একমাস চলেছিল সেই যুদ্ধ!


৭. কুম্ভকর্ণ

Class : মহারথী

কুম্ভকর্ণ, রাবণের দুর্দান্ত ভ্রাতা । এই ভয়ঙ্কর দানব দীর্ঘ ৬ মাস ধরে ঘুমিয়ে থাকতেন । কুম্ভকর্ণ সেসময় তার বিশাল দেহ ও মায়াবী শক্তি দ্বারা অনেক যোদ্ধাকে বধ করেছিলেন । তিনি হনুমানকে আহত করেন, সুগ্রীবকে অজ্ঞান করেন এবং তাকে বন্দী করেন, কিন্তু পরবর্তীতে  শ্রীরামের হাতে নিহত হন ।


৬. লক্ষ্মণ

Class : মহারথী

লক্ষ্মণ, ভগবান শ্রীরামের তীক্ষ্ম মেজাজের ভাই, তাঁর ভাইয়ের মতোই শক্তিশালী এবং উল্লেখযোগ্য একজন যোদ্ধা । তিনি অতিকায় এবং ইন্দ্রজিতের মতো অসাধারণ  যোদ্ধাদের হত্যা করেছিলেন । তার কাছ বহু বিধ্বংসী দিব্যাস্ত্রের জ্ঞান ছিল ।


৫. সুগ্রীব

Class : মহারথী

সুগ্রীব ছিলেন সূর্যদেবের বানর পুত্র । শ্রী রামের সাহায্যে বালিকে পরাজিত করার পর, তিনি বানরদের রাজা হন এবং তারপর শ্রী রামের বানর বাহিনীর সেনাপতি হন ।
সুগ্রীব ছিলেন শ্রী রামের সেনাবাহিনীর অন্যতম শক্তিশালী যোদ্ধা। যিনি রাবণের সেনাবাহিনীর অনেক যোদ্ধা যেমন কুম্ভ , নিকুম্ভ , প্রগাস , মহোদর এবং বিরূপাক্ষকে 
পরাজিত করেছিলেন ।


৪. রাবণ

Class : মহারথী (৭-৮ মহারথীর সমকক্ষ)

ঋষি বিশ্বশ্রবার জ্যেষ্ঠ পুত্র লঙ্কাপতি রাবণ রাজা এবং সেই সাথে তিন জগতের সম্রাট ছিলেন । রাবণ ছিলেন অন্যতম দক্ষ এবং শক্তিশালী যোদ্ধা যিনি যমদেব এবং মৃত্যুকে পরাজিত করেছিলেন ।
রাবণ তার ভাই কুবের তথা সম্পদের দেবতাকে পরাজিত করে তার পুষ্পকবিমান হরণ করেন । রাবণ এতটাই শক্তিশালী ছিলেন যে তিনি একবার ভগবান শিবকে লঙ্কায় নিয়ে আসার জন্য সমগ্র কৈলাস পর্বত তুলেছিলেন ।

রাবণের এমন একটি অমৃত ছিল যা তিনি তার নাভিতে রেখেছিলেন, যার কারণে তিনি অমর এবং অজর ছিলেন । যুদ্ধে রাবণকে কেউ হারাতে পারেনি ।

শ্রীরাম যুদ্ধে রাবণের নাভিতে ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিলেন, যার ফলে রাবণের অমৃত শুকিয়ে যায়, পরে রাবণের মৃত্যু হয় ।


৩. মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্র

Class : মহারথী (৭-৮ মহারথীর সমান)

রাম - পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর

শ্রী রাম হলেন বিষ্ণুর সপ্তম অবতার এবং রামায়ণের প্রধান চরিত্র । এখানে ঈশ্বররূপে নয়, মানবরূপে তার শক্তির তুলনা করা হয়েছে । ভগবান রাম ছিলেন রাজা দশরথের পুত্র , যাকে ঋষি বিশ্বামিত্র মার্শাল আর্ট শিখিয়েছিলেন এবং অনেক ঐশ্বরিক অস্ত্রের জ্ঞানও দিয়েছিলেন ।

শ্রী রামের ধনুক অর্থাৎ শারাং ধনুশ ছিল পৃথিবীর  সবচেয়ে শক্তিশালী ধনুক । রামায়ণ যুদ্ধে, শ্রী রাম কয়েক মুহুর্তের  মধ্যে রাবণের রাক্ষস ভাই খর এবং দুষন্ত সহ 14000 রাক্ষস বাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন । রাম ব্রহ্মাস্ত্র দিয়ে রাবণকে বধ করে রামায়ণের যুদ্ধ শেষ করেছিলেন ।


২. ইন্দ্রজিৎ Aka মেঘনাদ

Class : অতি মহারথী

আপনি শুনে অবাক হবেন যে রাবণের এই পুত্র স্বয়ং রাবণের থেকেও অধিক শক্তিশালী যোদ্ধা ছিলেন । মেঘনাদই একমাত্র যোদ্ধা যার কাছে ত্রিদেবের প্রধান তিনটি অস্ত্র ছিল । যেমন ব্রহ্মা দেবের ব্রহ্মাস্ত্র, ভগবান বিষ্ণুর বৈষ্ণবঅস্ত্র এবং শিবের পাশুপাতাস্ত্র ।

মেঘনাদ গুরু শুক্রাচার্যের কাছ থেকে যুদ্ধবিদ্যা আয়ত্ত করেন এবং সব ধরনের দৈবী অস্ত্র লাভ করেন । মেঘনাদ রাবণের অপূরনীয় স্বপ্ন অর্থাৎ ইন্দ্রদেবকে বন্দি করার স্বপ্ন পূর্ণ করেছিলেন । যা রাবণ স্বয়ং সারাজীবন চেষ্টা করেও তা পারেননি । এজন্য ভগবান ব্রহ্মা মেঘনাদের নাম রাখেন ইন্দ্রজিৎ । কারণ তিনি ইন্দ্রদেবকে পরাজিত করে স্বর্গ জয় করেছিলেন । তার প্রয়োগকৃত বৈষ্ণবঅস্ত্র শ্রীরামের প্রায় অর্ধেক বানরসেনাদের ধ্বংস করে দিয়েছিল । বানরসেনাদের মহা আতঙ্কের এক নাম ছিলেন এই মেঘনাদ ।

মেঘনাথের যুদ্ধকৌশল ছিল একেবারেই ভিন্ন । তিনি প্রতিটি যুদ্ধের আগে ছলনা করে নিজেকে মায়াবী শক্তির দ্বারা অদৃশ্য করতেন, যার কারণে তিনি যুদ্ধে অজেয় ​​ছিলেন । এমনকি রামায়ণেও, মেঘনাদই একমাত্র যোদ্ধা যিনি শ্রী রাম এবং লক্ষ্মণকে পরাজিত করেছিলেন । লক্ষ্মণও মেঘনাথকে পরাজিত করতে সক্ষম হন যখন তিনি তার ছলনা থেকে বেরিয়ে আসেন ।

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীর যে কয়েকজন যোদ্ধা অতিমহারথী শ্রেণীতে আছেন তাদের একজন ইন্দ্রজিৎ । আমি মেঘনাদকে দ্বিতীয় স্থানে রেখেছি এর কারণ বলছি...👇👇


১. বজরংবলী হনুমান

Class : অতি মহারথী

পবনপুত্র হনুমান ছিলেন ভগবান শিবের অবতার যিনি রামায়ণের ইতহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা ছিলেন এবং ছিলেন শ্রী রামের সবচেয়ে বড় ভক্ত ।

সাগর পার হয়ে সীতাকে খুঁজে বের করা হোক বা রাবণের সমগ্র লঙ্কায় আগুন লাগানোই হোক, হনুমানের পক্ষে কিছুই করা অসম্ভব নয় । হনুমান গদা চালনায় সবচেয়ে দক্ষ ছিলেন । মেঘনাদের তিনটি মহাশক্তিশালী অস্ত্র হনুমানের কোনো ক্ষতি করতে সক্ষম ছিল না । কারণ তিনি ত্রিদেবের বরপ্রাপ্ত ছিলেন । তাকে দেবতারা এতো বর আর আশীর্বাদ দিয়েছিলেন যে কোন মায়াবী শক্তিও তাকে কাবু করতে সক্ষম ছিল না । স্বয়ং শ্রীরামও তার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং শ্রীহনুমানকে পরাজিত করতে পারেননি ।

রামায়ণের যুদ্ধে শ্রী রামকে বিজয়ী করতে হনুমানজি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন । শ্রী রামের ভাই লক্ষ্মণের জীবন বাঁচাতে হনুমানজি সমগ্র সঞ্জীবনী পর্বত নিয়ে এসেছিলেন ।
হনুমান রাবণের অনেক শক্তিশালী যোদ্ধা যেমন অগ্নিকেতু , দিবন্তক , হিরাবন , মহিরাবণ এবং আকম্পানকে পরাজিত করেছিলেন ।
হনুমানের দেহ ছিল প্রায় অবিনশ্বর এবং বলা হয়ে থাকে তার দেহ বজ্রনির্মিত ।


আরও পড়ুন :

রথী, মহারথী এবং অতিমহারথীর মধ্যে পার্থক্য

মহাভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০ জন যোদ্ধা

হিন্দুধর্মের সবচেয়ে শক্তিশালী ৮ জন দেবতা

হিন্দুরা কেন মূর্তিপূজা করে ?

মহাভারতের রচয়িতা কে ছিলেন ?

হিন্দু ধর্মের বাণী

নমস্কার কেন করা হয় ?

ভীষ্মের ১০ টি উক্তি যা আপনার জীবন বদলে দেবে

মহর্ষি বাল্মীকির জীবনী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top