তাজমহলের প্রকৃত বয়স ৮৫৬ বছর !

0
তাজমহলের প্রকৃত বয়স ৮৫৬ বছর !

Table of Content (toc)

তাজমহল কি শিব মন্দির ছিল

সকলেরই জানা আছে যে, বাদশা আকবর তার সভাসদ আবুল ফজলকে দিয়ে তার রাজত্বকালের ইতিহাসে 'আকবরনামা’ লিখিয়েছিল । সেইরকম বাদশা শাহজাহান তার এক সভাসদ আব্দুল হামিদ লাহােরীকে দিয়ে তার রাজত্বকালের ইতিহাস বাদশানামা লিখিয়েছিল । মূল বাদশানামা ফারসী ভাষায় আরবি হরফে লেখা । এইগ্রন্থের (এশিয়াটিক সােসাইটি দ্বারা প্রকাশিত সংস্করণের) ৪০৩ ও ৪০৪ পৃষ্ঠায় তাজমহলের প্রকৃত ইতিহাস আছে । উপরিউক্ত ৪০৩ পৃষ্ঠার ২১ নং পংক্তি থেকে, ৪০৪ পৃষ্ঠার ৩৮ নং পংক্তি পর্যন্ত যা লেখা আছে তার বাংলা করলে দাঁড়ায় :

“১৫ই জমাদিয়াল আউয়াল, শুক্রবার পরপারের যাত্রী পবিত্র হজরৎ মমতাজ-উলজামানির সেই পবিত্র মৃতদেহ, যা অস্থায়ীভাবে কবরস্থ করা হয়েছিল, তা যুবরাজ শাহ সুজা:, ওয়াজির খাঁ এবং সতিউন্নেসা খানম, যারা মৃতার মন মেজাজের ব্যাপারে খুবই ওয়াকিবহাল ছিল এবং রানীদের রানীর মনােভাব বুঝতাে এবং তার কার্যাবলীর সঙ্গে পরিচিত ছিল । তাদের সাহায্যে রাজধানী আগ্রায় নিয়ে আসা হলো । এবং সম্রাট দিলেন যে, প্রত্যহ গরীব-দুঃখী ও ফকিরদের জাকাৎ (ভিক্ষা) বিতরণ করা হােক । শহরের দক্ষিণে, যেখানে সবুজ ঘাসে ঢাকা বিশাল উদ্যান, যার মাঝখানে সেই বিশাল ইমারৎ, যা পূর্বে রাজা মানসিংহের সম্পত্তি ছিল এবং যার বর্তমান মালিক তাঁর পৌত্র রাজা জয় সিংহ, সেখানেই স্বর্গবাসী রানীকে কবরস্থ করা হবে ঠিক ছিল ।

যদিও এ জয়সিংহ পূর্বপুরুষের সেই সম্পত্তিকে অতিশয় মূল্যবান মনে করতেন, তথাপি সম্রাট শাহজাহানকে তা বিনামূল্যে ছেড়ে দিতে রাজী হন । কিন্তু ধর্মীয় নিয়ম ও মৃতের প্রতি মর্যাদার কথা ভেবে সতর্ক সম্রাট সেই প্রাসাদ বিনা মূল্যে নেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না বিবেচনা করে তাঁকে শরীফাবাদ নামক স্থান দান করলেন । কাজেই সেই বিশাল প্রাসাদ (আলিমঞ্জিল)-এর বদলে জয় সিংহকে সরকারী জমি দেওয়া হল । ১৫ জমাদিয়াল আওয়াল শবদেহ আগ্রায় পৌছবার পর তার পরের বছর সেই শােভন শবদেহকে চিরবিশ্রামে শায়িত করা হল । আকাশচুম্বী মহিমান্বিত সেই সমাধিক্ষেত্রে উপস্থিত রাজধানীর উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা সরকারি আদেশে সেই পুণ্যবতী রমনীর দেহকে সাধারণের দৃষ্টির আড়াল করল এবং সেই আকাশ সমান গাম্ভীর্যপূর্ণ, শীর্ষদেশে গম্বুজ শোভিত (ওয়াগুম্বজে) মহিমান্বিত বিশাল প্রাসাদ (ইমারৎ-এ-আলিশা) এক মহিমান্বিত স্মৃতি সৌধে পরিণত হল ।”

শাহজাহানের যেই বেগমের স্মৃতিতে তাজমহল তৈরি করা হয়েছে বলে বলা হয়ে থাকে, তাঁর প্রকৃত নাম আরজুমন্দ বানু । ১৬২২ খ্রীষ্টাব্দে তার সঙ্গে শাহজাহানের বিয়ে হয় এবং ১৮ বছর বিবাহিত জীবনে ১৪ সন্তানের জন্ম দিয়ে ১৬৩০ (বা ১৬৩১) সালে বুরহানপুরে তার মৃত্যু হয় । ‘বাদশানামা’ অনুসারে মৃতদেহ সেই বছরই বুরহানপুরের অস্থায়ী কবর থেকে তুলে আগ্রায় আনা হয় এবং তার পরের বছর, অর্থাৎ ১৬৩১ বা ১৬৩২ সালে রাজা রাজসিংহের প্রাসাদে চিরস্থায়ী ভাবে কবরস্থ করা হয় । সেই সৌধকে তাজমহল নাম দেওয়া হয় এবং সামনের দিকের পাথরে কোরানের আয়াৎ উৎকীর্ণ করে পুরাে প্রাসাদকে একটা ইসলামী চেহারা দেওয়া হয় ।


যাই হােক, আজকের তাজমহল যে বাদশাহ শাহজাহান তৈরি করেননি,তা প্রমাণ করতে বাদশানামা’র উপরিউক্ত তথ্যটিই যথেষ্ট । তাহলেও আরও কিছুতথ্যাদি উপস্থিত করা যেতে পারে ।

আগ্রা শহরের একটি এলাকার নাম বটেশ্বর এবং তাজমহল থেকে প্রায় ৪ কিমি দূরে অবস্থিত । বিগত ১৯০০ সালে সেখানকার একটি টিবি খুঁড়ে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ” বা “এ এস আই’র অধিকর্তা জেনারেল কানিংহাম একটা শিলালিপি আবিষ্কার করেন, যা বটেশ্বর শিলালিপি নামে খ্যাত । সংস্কৃত ভাষায় লেখা ওই শিলালিপিতে মােট ৩৪টি শ্লোক আছে ।

প্রখ্যাত পুরাতত্ত্ববিদ শ্রী ডি জে কালে মহাশয় তার “এপিগ্রাফিকা ইণ্ডিয়া” গ্রন্থে শিলালিপিটির উল্লেখ করেছেন । উক্ত গ্রন্থের ১২৪ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, “আগ্রার নিকট মুঞ্জ বটেশ্বরে পাওয়া এই শিলালিপিটি বর্তমানে লখনৌ মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে । বিক্রম সম্বৎ ১২১২ সালে(১১৫৬ খ্রীঃ) আশ্বিন মাসের শুক্লা পঞ্চমীর দিন ওই শিলালিপিটি চন্দ্রাত্রেয় বংশের রাজা পরমার্দিদেব কর্তৃক স্থাপিত হয়েছিল । শিলালিপিতে বর্ণিত যে দুটি শ্বেতপাথরের মর্মর মন্দির পরমার্দিদেব ভগবান বিষ্ণু ও ভগবান মহাদেবের জন্য নির্মাণ করেছিলেন, পরবর্তীকালে মুসলমান আক্রমণকারীরা তা অপবিত্র করে । এই ঘটনার পর থেকে হয় তাে মন্দিরে পূজা ইত্যাদি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং সেই কারণেই লাহােরী তাকে মন্দির না বলে প্রাসাদ বলেছেন । সম্ভবত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কোন ব্যক্তি শিলালিপিটি বটেশ্বরে পুঁতে দেন ।  উল্লিখিত গ্রন্থের ১৪০-১৪১ পৃষ্ঠায় শীকালে চন্দ্রাত্রেয় বা চান্দেল রাজাদের বংশতালিকা দিয়েছেন তাতে দেখা যায় রাজা পরমার্দিদেবের অন্য নাম ছিল পরমাল । চান্দেল রাজাদের রাজ্যকে সাধারণ ভাবে বুন্দেল খণ্ড বলা হত, যার আসল নাম ছিল জেজাকভুক্তি ।


তাজমহলের প্রকৃত নাম তেজো মহালয় !

বর্তমানে আগ্রা শহরে শ্বেতপাথরের দুটি সৌধ আছে একটি তাজমহল আর অন্যটি ইদমৎ-উদ-দৌলার (নূরজাহানের বাবা) সমাধি । কাজেই এ ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকেনা যে বটেশ্বর শিলালিপিতে দুই শ্বেত পাথরের মন্দিরের একটিকে তাজমহল ও অন্যটিকে ইদম-উদ-দৌলার সমাধিক্ষেত্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে । বিশেষজ্ঞদের মতে শিবমন্দিরটিকেই তাজমহল বানানাে হয়েছে এবং তার কয়েকটি প্রমাণ নীচে দেওয়া হল–

তাজমহলের প্রধান গম্বুজের শীর্ষদেশে ধাতব চূড়া বা pinnacle-এ রয়েছে ত্রিশূল, যা ভগবান মহাদেবের অস্ত্র এবং প্রতীক । ভিতরে প্রধান গম্বুজের ছাদ থেকে ঝুলছে একটি শিকল, বর্তমানে যার কোন ব্যবহার নেই । সাবেক কালে ওই শিকলে ঝােলান থাকত একটি কলস, যা থেকে জল ফোটা ফোটা কবে শিবলিঙ্গের ওপরে পড়ত । তাজমহলে দুই তলায় কবর রয়েছে, ওপরের তলায় নকল কবর এবং নীচের তলায় আসল কবর । এরকম মুসলিম কবর খানা আর কোথাও নেই । কিন্তু দুইতলায় শিবলিঙ্গ বিশিষ্ট শিবের মন্দির উজ্জয়িনী ও আরও কিছু জায়গায় বিদ্যমান আছে । মুসলিম কবর খানায় কেউ কবরকে প্রদক্ষিণ করে না, তাই প্রদক্ষিণ করার ব্যবস্থাও থাকেনা । কিন্তু তাজমহলে প্রদক্ষিণ করার ব্যবস্থা রয়েছে । তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এক কালে ওই পথ দিয়ে ভক্তরা শিবলিঙ্গকে প্রদক্ষিণ করত ।

তাজমহলের ডান দিকের মেঝেতে শীর্ষদেশের ধাতব চূড়া ছাড়াও মঙ্গলঘট, আম্রপল্লব ইত্যাদি হিন্দুচিহ্ন বিদ্যমান, সাবেক কালে ওই শিবলিঙ্গের নাম ছিল তেজোলিঙ্গ এবং মন্দিরের নাম ছিল তেজোমহালয়’ । ওই শিবলিঙ্গের অন্য আরেকটি নাম ছিল অগ্রেশ্বর মহাদেব’,যা থেকে আগ্রা শহরের নামকরণ হয়েছে । এরকম আরাে অনেক প্রমাণ আছে যা থেকে সিদ্ধান্ত করা চলে যে, আজকে তাজমহল এককালে অগ্রেশ্বর মহাদেবের মন্দির ছিল ।

বিগত ১৯৫৯ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ শ্রী এস আর রাও আগ্রার আর্কিওলজিক্যাল সুপারিন্টেন্টে ছিলেন । সেই সময় তাজের ভূ-নিম্নস্থ দেওয়ালে একটা ফাটল দেখা দেয় এবং সেটা পরীক্ষা করার জন্য একটু খুঁড়তেই হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি বেরিয়ে পড়ে । অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তা ধামাচাপা দেওয়া হয় এবং তৎকালীন নেহেরু সরকারের নির্দেশে নতুন দেওয়াল গেঁথে নীচে যাবার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয় ।

১৯৭৩ সালে নিউইয়র্কের প্র্যাট স্কুলের পুরাতত্ত্বের অধ্যাপক মারভিন মিলস তাজের উত্তরের ফটকের থেকে কাঠের নমুনা সংগ্রহ করে আমেরিকায় নিয়ে যান এবং তার কার্বন-১৪ পরীক্ষা করেন । তাতে দেখা যায় যে, তাজমহল ১৩২০ থেকে ১৩৯৮ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে, অর্থাৎ শাহজাহানের প্রায় ৩০০ বছর আগে তৈরি । উপরিউক্ত বটেশ্বর শিলালিপি অনুসারে তাজমহলের বর্তমান বয়স ৮৫৬ বছর । কাজেই আরও উন্নত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার সাহায্যে তাজের বয়স নির্ভুলভাবে নির্ণয় না করে তার ৩৫৮ বছর পূর্তি উৎসব পালন করা হবে চূড়ান্ত হঠকারীতা এবং হাস্যকরও বটে ।

আপনারা যদি google-এ গিয়ে Shiva temples in Agra, image search করেন, তবে দেখতে পাবেন যে, অন্যান্য মন্দিরের সঙ্গে তাজমহলের ছবি দেখাচ্ছে ।


আরও জানুন

নবী মুহাম্মদের চাচা উমর বিন হাসনাম কর্তৃক মহাদেবের স্তব

রামকৃষ্ণ কি সত্যিই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ? সত্য উন্মোচন

পূজায় আরতি কেন করা হয় ?

আমলকী একাদশীর মাহাত্ম্য

হিন্দুদের কেন নামের পূর্বে বাবু শব্দ বসানো উচিৎ নয় ?

স্বপ্নে কি দেখলে কি ফলাফল লাভ হয়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top