শ্রীকৃষ্ণ কেন গোবর্ধন পর্বত ধারণ করেছিলেন ?

1
শ্রীকৃষ্ণ কেন গোবর্ধন পর্বত ধারণ করেছিলেন ?

শ্রীকৃষ্ণের গোবর্ধন পর্বত ধারণ

একদিন কৃষ্ণ বলরাম দেখল যে ব্রজবাসীরা দেবরাজ ইন্দ্রকে সন্তুষ্ট করার জন্য যজ্ঞের আয়ােজন করছেন । তখন শ্রীকৃষ্ণ একটি শিশুর মত তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে পিতা !’ এটা কোন যজ্ঞের আয়ােজন করা হচ্ছে । নন্দ মহারাজ তখন উত্তর দিলেন, কৃষ্ণ এই যে আয়ােজন করা হচ্ছে, তা একটা প্রচলিত প্রথা । যেহেতু ইন্দ্রের কৃপাতেই বৃষ্টি হয় এবং জীবনধারণের জন্য জল প্রয়ােজন; তাই ইন্দ্রের পূজা করা আমাদের কর্তব্য ।”

তখন কৃষ্ণ বললেন, “হে পিতা !” আপনারা যে উদ্দেশে এ আয়ােজন করেছেন তাতাে ভগবানও আপনাকে দিতে পারে । যদি ভগবান আপনাকে সবকিছু প্রদান করতে পারে, তাহলে কেন আপনি অন্যের শরণাপন্ন হবেন ? তাছাড়া দেবদেবীর পূজা করে যে ফল লাভ হয় তা ক্ষণস্থায়ী ।”এরপর কৃষ্ণ আরও বললেন, “গােবর্ধন পর্বত এবং বৃন্দাবনের সঙ্গে আপনার বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে তা আপনারা এমন এক যজ্ঞ অনুষ্ঠান করুন যাতে ব্রাহ্মণেরা এবং গােবর্ধন পর্বত সন্তুষ্ট হন ।” শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনে নন্দ মহারাজ অবশেষে রাজি হলেন ।


শ্রীকৃষ্ণের গোবর্ধন পূজা

তখন সমস্ত ব্রজবাসীরা শস্য এবং ঘি দিয়ে নানা রকমের খাবার তৈরি করল । সমস্ত ব্রাক্ষণদের নিমন্ত্রন করা হল; যারা বৈদিক মন্ত্র ভালভাবে উচ্চারণ করতে পারেন এবং অগ্নিতে আগুন আহুতি প্রদানে সক্ষম । সকল ব্রজবাসিরা তাদের তৈরি করা সকল দ্রব্য গােবর্ধন পর্বতের নিকট এনে রাখলেন । তখন শ্রীকৃষ্ণ একদিব্যরুপ ধারণ করে ঘােষণা করলেন, যে তিনিই হচ্ছেন গােবর্ধন পর্বত । এখানে বােঝা যাচ্ছে যে, শ্রীকৃষ্ণ যেমন আরাধ্য; তেমনি তাঁর ধাম বৃন্দাবন এবং গােবর্ধন পর্বত ও আরাধ্য । এরপর গােবর্ধন পর্বতরুপে শ্রীকৃষ্ণ ব্রজবাসিদের নৈবদ্য ভােজন করতে লাগলেন ।

ইন্দ্র জানতে পারল যে, শ্রীকৃষ্ণ সবাইকে তাঁর যজ্ঞ অনুষ্ঠান করতে নিষেধ করেছে । তখন তিনি অত্যন্ত ক্রদ্ধ হলেন । ইন্দ্র তখন সাম্বর্তক নামক মেঘকে আদেশ দিলেন, বৃন্দাবনের ওপর প্রবল বৃষ্টি ঝরাতে । ইন্দ্র তাঁর পদের অহংকারের ভগবানের প্রতিদ্বন্দিতা করাতে চেয়েছিলেন । প্রবল বর্ষণে বৃন্দাবনের সব জায়গা জলে ডুবে যেতে লাগল । তখন বৃন্দাবনের সমস্ত অধিবাসিরা শ্রীকৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করতে লাগল-“হে কৃষ্ণ তুমি সর্বশক্তিমান, কুপা বাসাতানা করতে লাগল-“হে কৃষ্ণ তুমি সর্বশক্তিমান, কৃপা করে তুমি আমাদেরকে রক্ষা ।” ব্রজবাসিরা প্রার্থনা শুনে কৃষ্ণ সবাইকে গােবর্ধন পর্বতে কাছে যেতে বললেন । তখন কৃষ্ণ তার বাম হাতের কনিষ্ট আঙ্গুল দিয়ে গােবর্ধন পর্বত তুলে ধরলেন । যেমনি করে একটি শিশু মাটি থেকে ব্যাঙের ছাতা তোলে ।

তখন শ্রীকৃষ্ণ সবাইকে বললেন- “হে ব্রজবাসীগণ, তােমরা নিশ্চিতে এই গােবর্ধন পর্বতের নিচে এসে দাঁড়াও । এই গােবর্ধন পর্বত আমাদের রক্ষা করবে । ব্রজবাসিরা তাদের সবকিছু নিয়ে সাতদিন সাতরাত ধরে সেই ২২ কি:মি: দীর্ঘ গােবর্ধন পর্বতের নিচে অবস্থান করল । শ্রীকৃষ্ণের এই অলৌকিক শক্তি দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল এবং ইন্দ্রের অহংকার ভেঙ্গে গেল ইন্দ্র বুঝতে পারেনি যে কৃষ্ণ বৃন্দাবন এভাবে ছােট শিশুর মতাে রুপ ধারণ করে লীলা বিলাস করতে পারেন । তখন ইন্দ্ৰ কৃষ্ণের কাছে এসে পার্থনা করতে লাগলেন, “হে প্রভু আপনার কৃপা আমি এখন বুঝতে পারছি যে, আপনি হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান । হে প্রভু, অহংকারশত আমি আপনার চরণে মহা অপরাধ করেছি। কৃপা করে আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, কেননা আমি অতি মূখ । তখন ভগবান শ্রী কৃষ্ণ বললেন, “হে ইন্দ্র, তােমার প্রতি কৃপা প্রদর্শন করার জন্য আমি তােমার যজ্ঞ বন্ধ করে দিয়েছিলাম । আমি কেবল তােমারই প্রভু নই, আমি সমস্ত দেবতার, এমনকি সমস্ত জগতেরও প্রভু ।”

হিতােপদেশ: সমস্ত জীবের, এমনকি সমস্ত দেবতার, শক্তি উৎস পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কৃষ্ণ । অহংকারবশত আমরা তা ভুলে গিয়ে ভগবানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি ।


আরও পড়ুন

ধ্রুবের উপাখ্যান

হিন্দুধর্মের অমৃত বাণী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top