আওরঙ্গজেব ও হিন্দু
আইজকাইলক্যার হিন্দু পোলাপানেরা ইতিহাস পড়েনা, ধর্মগ্রন্থ পড়েনা, শুধু ফেইসবুকে প্রেম করে, টুকটাক মার্ক্সবাদী বই পড়ে আর নিজেকে সেকুলার দাবী করে বসে । আর হিন্দু মেয়েরা আব্দুলের লগে প্রেম করে বলে "মেরা আব্দুল আলাগ হে" কিন্তু এই হা*লা*পু*রা জানেনা এরা কতোটা ভয়ানক । মুঘল শাসনামলে হিন্দুদের সাথে কি হয়েছিল! তাদের ধর্মগ্রন্থে হিন্দুদেরকে নিয়ে কিসব ঘৃণ্য কথাবার্তা বলা হয়েছে সেগুলোই এই সেক্যুলার হা*লা*পু*রা জানে নাহ ।
আজকে রবিদার চায়ের দোকানে বসে একটা বিড়ি ধরানোর পর মাথাটা খুলে গেল । আসলে বিড়ি বিষয়টা স্বর্গীয়! ভাবলাম এইসব সেকু মাকুদের জন্য কিছু লেখা দরকার । যেই ভাবা সেই কাজ । সেক্যুলার তরুণ তরুণীরা! আজকে থেকে আমি তোমাদের জন্যই লিখবো । উন্মোচন করব মুসলিম শাসকদের কালো অধ্যায় । পড়ে আবার তোমাদের মমতা দিদির মতো হাম্বা হাম্বা, দুম্বা দুম্বা করো না । একটু ভাবার চেষ্টা করো ।
আওরঙ্গজেব: ইসলামের প্রতি আনুগত্য
মুঘল সম্রাটদের মধ্যে আওরঙ্গজেবকে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট বলা হয়। পোলাডা ভালো মানুষ ছিল। আমার এলাকার মুসলমানেরা এখনো তাকে জিন্দাপির বলে। তিনি ছিলেন খাঁটি মুসলমান -পরম ধার্মিক। ইসলাম ধর্মের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় অনুরাগ ও প্রশ্নাতীত আনুগত্য নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী তিনি রাজ্য শাসন করেছেন, কখনও বিচ্যুত হননি।
অ-মুসলমান মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক নন-জীবনের বিনিময়ে তাকে দিতে হয় জিজিয়া কর। "হজরৎ মহম্মদ প্রথম এই কর প্রচলন করেন। কোরানে বলা হয়েছে-যারা অবিশ্বাসী-সত্য ধর্ম (ইসলাম) অনুসরণ করে না, তাদের সাথে যুদ্ধ করবে যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে আনুগত্যের নিদর্শন স্বরূপ স্বেচ্ছায় জিজিয়া দেয়।" (সুরা-৯/২৯) (It was first imposed by Muhammad, who bade his followers "fight those who do not profess the true faith, till they pay jazia with the hand in humility-Quran, IX-29.)
এই কর দেওয়ার একটি বিশেষ পদ্ধতি আছে। উলেমাগণ সম্রাটকে জানালেন যে ধর্মশাস্ত্র অনুসারে জিজিয়া কর প্রদানের নিয়ম হল-"এই কর প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজে হাজির হয়ে দিতে হবে। অন্য কারও মারফত পাঠালে তা গ্রহণ করা হবে না। তহশীলদার উঁচু আসনে বসে থাকবে। জিজিয়া কর প্রদানকারী ব্যক্তি পায়ে হেঁটে এসে তার সামনে দাঁড়াবে। তখন তহশীলদার জিম্মির উপর হাত রেখে চিৎকার করে বলবে-হে জিম্মি! জিজিয়া কর দাও।" (...the books on Muslim Canon Law. lay down that the proper method of collecting the "Jaziya" is for the zimmi to pay the tax personally; if he sends the money by the hand of an agent it is to be refused; the taxed person must come on foot and make the payment standing, while the receiver should be seated and after placing his hand above that of the "Zimmi" should take the money and cry out, "O, zimmi! pay the commutation money.") পদ্ধতিটি বড়ই বিচিত্র। এ শুধু আর্থিক পীড়ন নয়-প্রকাশ্যে চূড়ান্ত অপমান।
জিজিয়া করের পুনঃপ্রবর্তন ও প্রতিবাদ
মুসলিম শাসনে হিন্দুদের উপর এই জিজিয়া কর সব সময়ই ধার্য হত। সম্রাট আকবর এই কর বিলোপ করেছিলেন। কোরানের বিধান অনুযায়ী ইসলামের প্রসার ও পৌত্তলিকতা নির্মূল করার উদ্দেশ্যে ঔরঙ্গজেবের এক আদেশে ১৬৭৯ খ্রিঃ ২রা এপ্রিল সাম্রাজ্যের সর্বত্র জিজিয়া কর পুনঃপ্রবর্তিত হয়। হিন্দুরা এর প্রতিবাদে ঔরঙ্গজেবেব প্রাসাদের কাছে সমবেত হয়। তারা কাতর প্রার্থনা জানায় কর প্রত্যাহারের জন্য। সম্রাট নির্বিকার।
পরের শুক্রবার ঔরঙ্গজেব জামা মসজিদে নমাজ পড়তে যাবেন। কিন্তু লালকেল্লা থেকে জামা মসজিদ পর্যন্ত হিন্দু বিক্ষোভকারীদের বিশাল জমায়েত। সতর্কীকরণ সত্ত্বেও হিন্দুরা স্থান ত্যাগ করে না। ঔরঙ্গজেব একঘণ্টা অপেক্ষা করে হাতীর সাহায্যে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিতে আদেশ দেন। বহাল রইল জিজিয়া কর।
জিজিয়া কর ও হিন্দু সমাজে প্রভাব
জিজিয়া করের বিরুদ্ধে হিন্দুরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু সম্রাটের আদেশে বলপ্রয়োগ করে তা ভেঙে দেওয়া হয়। কর দিতে হবে বলে হিন্দু ব্যবসায়ীরা দাক্ষিণাত্যে মোগল শাসনাধীন অঞ্চলে যেত না। সামরিক বাহিনীর রসদের সরবরাহ ব্যাহত হয়। সেনাপতি সম্রাটকে অনুরোধ করেন তার এলাকায় কর প্রত্যাহার করার জন্য। উত্তরে ঔরঙ্গজেব বললেন, "সৈন্যরা উপবাসী থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে কি তিনি কোরানের নির্দেশ অনুযায়ী বিধর্মীদের কাছ থেকে কর না নিয়ে তার আত্মাকে জাহান্নামে পাঠাবেন?"
জিজিয়া করের উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুদের উপর করের বোঝা চাপিয়ে মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা (ধর্মান্তরের সাহায্যে)। সমসাময়িক পর্যটক মানুচির মন্তব্যে তার সমর্থন পাওয়া যায়: "জিজিয়া কর দিতে অক্ষম হিন্দুরা তহশীলদারের লাঞ্ছনা-অপমানের হাত থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করত। ঔরঙ্গজেব সন্তোষ প্রকাশ করে বলছেন-এইভাবে পীড়ন ও জবরদস্তি করলেই হিন্দুরা বাধ্য হবে মুসলমান হতে।"
🔗 বিস্তারিত জানতে দেখুন:
হিন্দুদের উপর অন্যান্য বৈষম্য
শুধু জিজিয়া নয়-অন্যান্য করের ক্ষেত্রেও হিন্দুদের উপর বৈষম্য করা হত।
১৬৬৫ খ্রিঃ ১০ এপ্রিল জারি করা এক অধ্যাদেশ অনুযায়ী মুসলমান ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সকল মালের মূল্যের ২.৫% এবং হিন্দুদের ক্ষেত্রে ৫% মাশুল ধার্য করা হয়।
১৬৬৭ খ্রিঃ মে, ঔরঙ্গজেব মুসলমান ব্যবসায়ীদের মাশুল থেকে সম্পূর্ণ অব্যাহতি দিলেন-কিন্তু হিন্দুদের ক্ষেত্রে তা বহাল রইল।
হিন্দুদের ধর্মান্তরে উৎসাহিত করার জন্য নব মুসলমানদের (ধর্মান্তরিত) আর্থিক পুরস্কার ও সরকারি চাকুরি দেওয়া হত।
চরম আর্থিক নিপীড়ন চালিয়ে ঔরঙ্গজেব হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টার কোন ত্রুটি করেননি।
সম্রাটের রাজস্ব বিভাগে অনেক মধ্যবিত্ত হিন্দু চাকরি করত। ঔরঙ্গজেব এই ব্যবস্থার পরিবর্তনে উদ্যোগী হলেন।
১৬৭১ খ্রিঃ এক ঘোষণায় বলা হল তহশীলদার অবশ্যই হবে মুসলিম; তালুকদারদের নির্দেশ পাঠান হল যে তারা যেন তাদের অধীন সকল হিন্দু পেশকার ও হিসাবরক্ষকদের অবিলম্বে ছাঁটাই করে মুসলমান নিয়োগ করে।
ধর্মান্তরের প্রলোভন
হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার জন্য ঔরঙ্গজেব দুটি পন্থা নিয়েছিলেন—পীড়ন ও প্রলোভন। সদ্য ধর্মান্তরিত হয়েছে এমন হিন্দুদের হাতির পিঠে চড়িয়ে বাদ্য সহযোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নগর পরিক্রমণ করত। ধর্মান্তরিত নব মুসলমানদের দেওয়া হত মাসোহারা।
১৬৯৫ খ্রিঃ মার্চ মাসে ঔরঙ্গজেবের আর এক ঘোষণায় রাজপুত ব্যতীত সকল হিন্দুদের হাতি, ঘোড়া, পাল্কিতে চড়া ও সঙ্গে অস্ত্র রাখা নিষিদ্ধ হল।
আওরঙ্গজেব ও হিন্দু মন্দির
পৌত্তলিকতা ইসলামের মূল আদর্শের বিপরীত। মুসলমানের পক্ষে মন্দির দর্শন করাও মহাপাপ। ইসলামের প্রধান শত্রু হিন্দুধর্ম ও তার মূর্তিপূজা পদ্ধতিকে হিন্দুস্থানের মাটি থেকে নির্মূল করার জন্য সম্রাট ঔরঙ্গজেব সব রকম ব্যবস্থাই নিয়েছিলেন।
তিনি এই উদ্দেশ্যে একটি নতুন সরকারি মন্ত্রক সৃষ্টি করেন। এই মন্ত্রকের অধীনে ছিল হাজার হাজার কর্মচারী—যাদের পদবী ছিল সেন্সর (Muhatasib)। হিন্দুমন্দির ও বিগ্রহ চূর্ণ করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ।
এদের সংখ্যা এত বিশাল ছিল কাজের সমন্বয় ও তদারকির জন্য একজন Director General (দারোগা) নিয়োগ করতে হয়।
ঔরঙ্গজেব ৯ এপ্রিল ১৬৬৯ তারিখে আদেশ জারি করেন—"কাফের হিন্দুদের সকল মন্দির ও শিক্ষায়তন ধ্বংস এবং তাদের ধর্মীয় প্রচার, শিক্ষা ও পূজা-অর্চনা বন্ধ করো।"
প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ ছিলেন তটস্থ। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁরা সম্রাটকে জানাতে পারছেন যে তাঁদের এলাকায় সমস্ত মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে ততক্ষণ তাঁদের স্বস্তি ছিল না।
হিন্দুদের প্রধান মন্দিরগুলি ধ্বংস করার গুরু দায়িত্ব সম্রাট নিজেই গ্রহণ করেন। এর মধ্যে সোমনাথ মন্দির, মথুরায় শ্রীকৃষ্ণ মন্দির ও বেনারসের বিশ্বনাথ মন্দির বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
🔗 আরও পড়ুন:
- Somnath Temple - Wikipedia
- Kashi Vishwanath Temple - Wikipedia
- Krishna Janmabhoomi Temple, Mathura - Wikipedia
সিংহাসনে আরোহণের পূর্বে
আওরঙ্গেজেব তখন গুজরাটের সুবেদার। 'চিন্তামন' গুজরাটের বিখ্যাত মন্দির। আওরঙ্গজেব মন্দিরের মধ্যে গো-হত্যা করে মন্দিরকে অপবিত্র করেন। পরে মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরিত করে নাম দেওয়া হয়-কুয়াত-অল-ইসলাম। শাজাহান অবশ্য মন্দিরটি হিন্দুদের ফিরিয়ে দেন। (The temple of Chintaman, built by Sitadas jeweller, was converted into a mosque named Quwat-ul-islam by order of the Prince Aurangzib, in 1645. He slaughtered a cow in the temple.)
সিংহাসনে আরোহণের পর
আমার রাজত্বের প্রথম দিকে সোমনাথ মন্দির ধ্বংস করা হয়। বন্ধ হয় পুতুল পূজা। আমি জানি না সেখানকার বর্তমান অবস্থা কি। যদি মূর্তিপূজক হিন্দুরা পুনরায় পূজা-অর্চনা শুরু করে থাকে তবে মন্দিরটিকে এমন ভাবে গুঁড়িয়ে দাও যাতে তার চিহ্ন মাত্র না থাকে।" -এনায়েতউল্লাকে লেখা ঔরঙ্গজেবের পত্র। (The temple of Somnath was demolished early in my reign and idol worship (there) put down. It is rot krown what the state of things there is at present. If the idolators have again taken to the worship of images at the place, then destroy the temple in such a way that no trace of the building may be left.)'
![]() |
সোমনাথ মন্দির |
১৬৬৫ খ্রিঃ ২০ নভেম্বর-এর আদেশ (ফারমান) নামায় তিনি ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীকে জানালেন: সিংহাসনে আরোহণ করার পূর্বে আমার আদেশে গুজরাটের আমেদাবাদ ও অন্যান্য অঞ্চলের সকল মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। সেই সকল মন্দির পুনরায় সংস্কার করে বিগ্রহ পূজা শুরু হয়েছে। অবিলম্বে আমার পূর্বে আদেশ কার্যকর কর।"
১৬৬১ খ্রিঃ ১৯ ডিসেম্বর ঔরঙ্গজেবের সেনাপতি মীরজুমলা কুচবিহার নগরে প্রবেশ করে। সৈয়দ মহম্মদ সাদিক নিযুক্ত হলেন প্রধান বিচারপতি। তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হল সকল মন্দির ভেঙ্গে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করার জন্য। মীরজুমলা স্বয়ং কুঠার নিয়ে নারায়ণের মূর্তি খণ্ড-বিখণ্ড করে। রাজত্বের প্রথম দিকে ঔরঙ্গজেব এক আদেশ জারি করে স্থানীয় কর্মচারীদের নির্দেশ দিলেন- "ওড়িশার কটক হতে বাংলার মেদিনীপুর-এই সমগ্র এলাকার সকল মন্দির (পাকা এবং কাঁচা) ভেঙে দাও।" (19 Dec. 1661 Mir Jumla entered the city of Kuch Bihar, which had been evacuated by its king and people, and appointed Sayyid Md. Sadiqe to be chief judge, with directions to destroy all the Hindu temples and to erect mosques in their stead. The General himself with a battle axe broke the image of Narayan. An order issued early in his reign has been preserved in which the local officers in every town and village of Orissa from Katak to Medinipur are called upon to pull down all temples, including even clay huts.)
২০ নভেম্বর-১৬৬৫-- "মহামহিম সম্রাটের গোচরে এসেছে যে, গুজরাটের অন্তর্গত মহলের অধিবাসীরা; যে সকল মন্দির সম্রাটের আদেশে পূর্বেই ধ্বংস করা হয়েছে-সেগুলি পুনরায় নির্মাণ করেছে... অতএব সম্রাটের আদেশ এই সকল মন্দিরকে অবিলম্বে ভেঙে দিতে হবে।"
৯ মে-১৬৬৯-দণ্ডধারী (Mace-bearer) আলি বাহাদুরকে পাঠান হয় মালারনার (Malarna) মন্দির ধ্বংসের কাজে।
২ সেপ্টেম্বর-১৬৬৯-দরবারে সংবাদ এসেছে, সম্রাটের আদেশ অনযায়ী তাঁর কর্মচারীরা বেনারসের বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করেছে।
তথ্যসূত্র
- Sir J. N. Sarkar-History of Aurangzib, Vol-III, P-173
- Sir J. N. Sarkar-History of Aurangzib, Vol-III, P-176
- Sir JN. Sarkar-History of Aurangzib, Vol-III, 1-179
- IBID, P-176
- Sir J.N. Sarkar-History of Aurangzib, Vol-III, P-174 2
- Sir Jadu Nath Sarkar-History of Aurangzih, Vol-1ll, P-185
- IBID, P-180
- Sir J. N. Sarkar-History of Aurangzib, Vol-III, P-185
- Sir Jadu Nath Sarkar-History of Aurangzib, Vol-III, P-186, 174