হিন্দুধর্মে নারীর অবস্থান

2
হিন্দুধর্মে নারীর অবস্থান

হিন্দুধর্মে নারীর মর্যাদা

একজন হিন্দু পিতা, কন্যাকে তার প্রাপ্য বা প্রাপ্যের চেয়ে বেশী দিয়ে শশুর বাড়িতে পাঠায়, (যে সম্পত্তি তার এবং তার স্বামী দুজনেরই হয়) যাতে সে মাথা উঁচু করে শশুড় বাড়িতে ঢুকতে পারে এবং মাথা উঁচু করে থাকতে পারে । সেই নারী যদি তার স্বামীর সম্পত্তিকে নিজের বলে ভাবতে না পারে ।  তাহলে সে তো তার স্বামীর স্ত্রী ই নয়, এমন হলে একদিন না একদিন সে তার স্বামীকে ত্যাগ করে চলে যাবেই ।  এই ঘটনা আরো দ্রুত ঘটবে, যদি সেই নারীর নামে তার পিতার সম্পত্তি বা ব্যক্তিগত কোনো সম্পত্তি থাকে । এসব বিবেচনা করেই পৃথিবীর সংবিধান রচয়িতা মুনি-ঋষিরা, পিতার সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার দেন নি । কারণ, নারীকে যদি পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার করা হয়, সমাজে নানারকম অশান্তি ও অস্থিরতারই শুধু সৃষ্টি হবে না, অনেক নারী নিজেই নিজেকে ধ্বংস করবে নিজ বুদ্ধি দ্বারাই । সমাজে এর বহু উদাহরণ রয়েছে, চারপাশে তাকালেই আমার কথার বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে পারবেন ।

হিন্দু আইনে কোনো বিবাহ বিচ্ছেদ নেই । এটাও নাকি অনেকের গাত্রদাহের কারণ । অথচ এর মাধ্যমেই যে কোনো নারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেটা এই নির্বোধদের মাথাতেই ঢোকে না। এদের যুক্তি হলো, নানা কারণ, যেমন- নপুংসকতা ও স্বামীর অত্যাচারের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ জরুরী এবং এর জন্য আইন থাকা আবশ্যক। কিন্তু এটা ৯৯% এরও বেশী ক্ষেত্রে সত্য যে- কোনো নারী, তার স্বামীর হাতে মার খায় তার নিজের দোষে । নিজের জিহ্বাকে কন্ট্রোল করতে না পেরে । এদেরকে বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার দেওয়া হবে কি এই কারণে যে এরা যাতে স্বামীর সাথে আরো বেশি ঝগড়া করতে পারে ? 


আর কোনো পুরুষ যদি নপুংসক হয় এবং তার যদি যৌনক্ষমতা না থাকে, তাহলে এমনিতেই হিন্দু নারীরা সেই স্বামীকে ত্যাগ করে আবার বিয়ে করতে পারে । এমনকি যে কোনো বিবাহিতা হিন্দু নারী আবার বিয়ে করতে পারে, যদি তার স্বামী তাকে ভরণ পোষণ না করে বা ১২ বছর পর্যন্ত নিরুদ্দেশ থাকে । নারীর এসব অধিকার তো শাস্ত্রসম্মত, এসব অধিকার নারীকে আবার নতুন করে দেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে কেনো ? নাকি এসব অধিকারের প্রশ্ন তুলে মুনি ঋষিদের দেওয়া সনাতনী বিধানকে অবাস্তব প্রমাণ করার চেষ্ট হচ্ছে ?

হিন্দু পুরুষরা চাইলেই যে তার স্ত্রীকে কারণে অকারণে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারে না । এটাই একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে বড় অধিকার, যে অধিকার কোনো মুসলিম নারীর নেই। ইসলাম হয়তো নারীকে সামান্য একটু পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার দিয়েছে, কিন্তু নারীর এই সামান্য একটু পৈতৃক সম্পত্তির কারণে মুসলিম সমাজে যে অশান্তি, তার কোনো তুলনা নেই । উল্টো দিকে তালাক মুসলিম সমাজে একটি ছেলে খেলা এবং এই তালাকের কারণে একটি মুসলিম নারীর সংসার জীবনের কোনো গ্যারান্টি নেই । কখন যে সে তার সংসার থেকে বিতাড়িত হবে, তা সে নিজেও জানে না ।


বর্তমানে বহু মুসলিম নারী হয়তো মোটামুটি নিশ্চিন্ত একটি সাংসারিক জীবন যাপন করছে, কিন্তু সেটা হিন্দু সমাজের প্রভাবে, হিন্দু সমাজের সুখ-শান্তি দেখে মুসলমানরা হিন্দুদের মতো জীবন যাপন করার চেষ্টা করছে, প্রকৃত ইসলামে এসবের কোনো বালাই নেই । প্রকৃত ইসলামের মূল কথা হলো- যাকে ভালো লাগে বিয়ে করো । আর যাকে ভালো না লাগে তালাক দিয়ে বিতাড়িত করো । এরপর সেই নারী রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করুক বা বেশ্যাবৃত্তি করুক, সেটা তার বিষয় ।

মুসলিম নারীদের আরেকটি করুন ট্রাজেডির দিক হলো, পিতার সম্পত্তির অধিকার নিতে গিয়ে তার ভাইদের সাথে সম্পর্ক খারাপ করে এবং কোনো কারণে যখন স্বামীর কাছ থেকে তালাক খায়, তখন সে ভাইদের কাছে গিয়েও দাঁড়াতে পারে না । কিন্তু একজন হিন্দু নারীর জীবনে এই সমস্যা নেই । প্রথম কথা হচ্ছে- কোনোভাবেই সে তার স্বামীর সংসার থেকে বিতাড়িত হবে না, যদি কোনো কারণে স্বামী মারা যাওয়ায় সে অসহায় হয়েও যায়, তার ভাইদের কাছে গিয়ে সে দাঁড়াতে পারে । কিন্তু হিন্দু নারীরা যদি পিতার সম্পত্তির অধিকার পায়, তাহলে সেই সম্পত্তির ভাগ নিতে গিয়ে নিশ্চতভাবে তার ভাইদের সাথে তার সম্পর্ক খারাপ হবে, মনোমালিন্যের কারণে ঐ নারী কখনো তার বাপের বাড়িতে বেড়াতেও যেতে পারবে না । ফলে সম্পত্তি নিতে গিয়ে নারীরা তার বাপের বাড়ি হারাবে, হারাবে বিপদে আপদে ভবিষ্যতের আশ্রয়, ফলে সে পথে এসে দাঁড়াবে, এই সুযোগ নেবে কিছু দুষ্ট মানুষ, তারা তার সম্মানহানি করবে । মুসলিম সমাজে অহরহ এই ধরণের ঘটনা ঘটছে, একটু চোখ কান খোলা রাখলেই আমার কথার বাস্তবতার প্রমাণ পাবেন ।

একটি নারীর সারাজীবনের স্বপ্ন তার সংসার, বিয়ের মাধ্যমে যা সে লাভ করে এবং একজন হিন্দু নারী যখন সেই সংসার পায়, তখন তা এককালীন পায়, কোনোভাবেই তার কাছ থেকে সেটা কেউ কেড়ে নিতে পারে না, ফলে একজন হিন্দু নারীর সংসারজীবন সবদিক থেকে নিশ্চিন্ত, সংসার হারিয়ে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ানোর বা বাপের বাড়িতে গিয়ে বোঝা হওয়ার ভয় তার কখনো থাকে না । আর এটাই একটি নারীর জীবনের সবচেয়ে বড় অধিকার, যা হিন্দুধর্ম তাকে প্রদান করেছে, যদি মেয়েরা তা বোঝে ।


আরও জানুন

প্রতিমা কেন বিসর্জন দেওয়া হয় ?

হিন্দু বিবাহ সম্পর্কিত কিছু তথ্য

হিন্দুরা কেন মূর্তিপূজা করে ?

মহাভারত বাংলায় অনুবাদ করেন কে ?

[PDF] মহাভারত - রাজশেখর বসু

মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে ছিলেন ?

হিন্দুদের নিত্য প্রয়োজনীয় মন্ত্র

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. একমাত্র সনাতন ধর্মই নারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছে ❤️

    নিজেকে হিন্দু বলতে গর্ববোধ হচ্ছে

    উত্তরমুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top