একাদশীতে কি কি করা যাবে না ও কি কি খাওয়া যাবে না ?

4

একাদশী পালনের নিয়মাবলী

একাদশী সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর

একাদশী পালনের নিয়মাবলী

Table Of Content (toc)

একাদশীর খাদ্য তালিকা

১. সামর্থ অনুযায়ী দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার ও দ্বাদশীতে একাহার করবেন ।

২. এতে অসমর্থ হলে একাদশীতে অনাহার ।

৩. যদি এতেও অসর্মথ হন একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জ্জন করে ফল-মূলাদি অনুকল্প গ্রহনের বিধি আছে । একাদশীতে কিছু সবজী ফল-মূলাদি গ্রহণ করতে পারেন । যেমনঃ গোলআলু, মিষ্টিআলু ও চালকুমড়া, বাদাম তৈল অথবা ঘি দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করতে পারেন ।

৪. দুধ, কলা, আপেল, আঙ্গুর, আনারস, বেল, তরমুজ, নারিকেল, পেয়ারা, শসা, মিষ্টিআলু ইত্যাদি ফল-মূলাদি আহার করতে পারেন ।

আরো জানুনঃ মহালয়া কেন পালন করা হয় ? এর মাহাত্ম্য কি ?


পঞ্চ শস্য কি কি ?

১. ধান জাতীয় খাদ্যঃ যেমন-চাউল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চাউলের পিঠা, খৈ ইত্যাদি ।

২. গম জাতীয় খাদ্যঃ যেমন- আটা, ময়দা, সুজি, রুটি, বিস্কুট ইত্যাদি ।

৩. যব বা ভূট্টা জাতীয় খাদ্যঃ যেমন- ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি ।

৪. ডাল জাতীয় খাদ্যঃ যেমন- মুগ, মাসকালাই, খেসারী, মশুরী, ছোলা, অড়হড়, বরবটী, শিম ইত্যাদি ।

৫. সরিষা,তিল তৈল ইত্যাদি ।

আরো জানুনঃ কেন হত্যা করা হয়েছিল শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুকে ?

একাদশীতে যা যা বর্জনীয় ❌

  • পঞ্চ রবিশস্য একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হবে ।
  • একাদশী ব্রত করলে যে কেবল নিজের জীবনের সদগতি হবে তা নয়,একাদশী ব্যক্তির মৃত পিতা-মাতাও নরক থেকে উদ্ধার হতে পারে ।
  • একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে যেমন নিজে নরক বাসী হবে, অন্যকে ভোজন করালেও নরকবাসী হবে । কাজেই একাদশী পালন করাই আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য ।
  • একাদশীতে পারন পঞ্জিকাতে একাদশী পালনের সময় দেয়া থাকে সেই সময়ের মধ্যে ভগবানকে নিবেদন করে প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত দরকার । নতুবা একাদশীর কোন ফল লাভ হয় না , নরকবাসী হতে হয় ।
  • একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের পূজাস্মরণ, মনন ও শ্রবণ-কীর্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হবে ।

একাদশীতে কি কি খাওয়া যাবে ? ✅

গোল আলু , মিষ্টি আলু , চাল কুমড়ো , পেঁপে , ফুলকপি, কাঁচা কলা ইত্যাদি সবজি ঘি অথবা বাদাম তৈল দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করতে পারেন, লবণ(সন্ধুক), গোলমরিচ, গোটা জিরা, আদা, নারিকেল ব্যবহার্য । কিন্তু অন্য কোন রকম ফোরন বা মসলা ব্যবহার করা যাবে না । 

বাহিরের মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য খাওয়া যাবে না তবে নিজের হাতে লেবু দিয়ে ছানা তৈরি করে যদি মিষ্টি তৈরি করা হয় তাহলে গ্রহণ করা যাবে ।

শ্যামা চাওল খাওয়া যাবে না । বড় মোটা দানার সাবু খাওয়া যাবে যেটা মন্দিরে পাওয়া যায় ।

একাদশীতে কি শ্রাদ্ধ করা যায় ?

হ্যা, করা যায় । মনুষস্যগণের মধ্যে শূদ্র, বৈশ্য, ক্ষত্রিয় এবং ব্রাহ্মন - চার বর্ণেরই পিন্ডদান বিধি একরূপ । পিন্ডের দ্রব্যাদিও চার বর্ণের জন্য একই । ১৩ দিনের দিন যেহেতু যমদূতেরা মৃতব্যক্তিকে নিয়ে যমালয়ে দিকে যাত্রা করে, তাই শ্রাস্ত্র সিদ্ধান্ত হলো - ১০ দিন অশৌচ পালন ও ক্ষৌরকর্ম, ১১ দিনে শ্রাদ্ধ বা পিন্ডদান (একাদশী থাকলে ১২ দিনে) । ১৩ দিনের দিন যেহেতু যমদূতেরা মৃতব্যক্তিকে নিয়ে যমালয়ে দিকে যাত্রা করে, তবে ১৩, ১৫, ২০ অথবা ৩০ দিনে শ্রাদ্ধ বা পিন্ডদান করলে সেই পিন্ড খাবে কে ? ব্রাহ্মণেরা এইভাবে আমাদেরকে ভুল পথে চালিত করছে । এইজন্য আমাদের ধর্মকে জানতে হবে ভালো করে ।

এখানেঃ হিন্দুরা কেন পূজা করে প্রতিমা বিসর্জন দেয় ?

মাসিক চলাকালীন কি একাদশীর ব্রত পালন করা যায় ?

এক্ষেত্রে 'শ্রীশ্রীহরিভক্তিবিলাস' এ শ্রীল সনাতন গোস্বামীপাদ  মহর্ষি শৃঙ্গির  বচন উদ্ধৃত করে সুস্পষ্ট নির্দেশনা  দিয়েছেন ।

" একাদশ্যাং ন ভূঞ্জিথাঃ নারী দৃষ্টা রজস্যাপি "

অর্থাৎ নারী যদি রজস্বলাও হয় তথাপি একাদশীতে ভোজন করবে না । মানে মাসিক হলেও একাদশী কর্তব্য ।

একাদশীতে কি লবণ খাওয়া যায় ?

অবশ্যই সন্ধুক লবণ ব্যবহার করতে হবে, এটা সব উপবাসের জন্য প্রযোজ্য ।


একাদশীতে কি বাদাম খাওয়া যায় ?

হ্যা । বাদামসহ অন্যান্য আহায্য যেমন — দুধ, কলা, আপেল,আঙ্গুর, আনারস, আখঁ, আমড়া, তরমুজ, বেল, মিষ্টি আলু ও লেবুর শরবত ইত্যাদি ফলমূলাদি খেতে পারেন ।


একাদশীতে মৃত্যু হলে কি হয় ?

একাদশী থাকাকালীন যদি কারো মৃত্যু ঘটে । তাহলে সে স্বর্গ নয়, সরাসরি বৈকুন্ঠলোকে গমন করে ।

একাদশীর আগের দিন কি সহবাস করা যায় ?

না, একাদশী পালনের সময় আমাদের অবশ্যই সংযমী হতে হবে । একাদশীর আগের দিন, সহবাস সম্পূর্নরূপে নিষিদ্ধ ।


একাদশীতে কি ঔষধ খাওয়া যাবে ?

একাদশী,জন্মাষ্টমী ইত্যাদি উপবাসে ঔষধ খেলে উপবাস বা ব্রত ভঙ্গ হবে না । এর প্রমাণ স্বরূপ হরিভক্তি বিলাসে (১২/৪০) এবং জৈবধর্ম গ্রন্থে মহাভারতের উদ্যোগপর্ব থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছেঃ

অষ্টৈতানাব্রতাঘ্নানি আপো মূলং ফলং পয়ঃ।
হবির্ব্রাহ্মণকাম্যা চ গুরোর্বচনমৌষধম্।।

অনুবাদ- আটটি দ্রব্য গ্রহনে ব্রত ভঙ্গ হয় না । তা হলো জল, মূল, ফল, দুধ, ঘৃত, ব্রাহ্মণকাম্যা, গুরুদেবের বচন এবং ঔষধ।"

ঔষধে যদি পঞ্চরবিশস্য মিশ্রিত থাকে, তাহলেও  তা গ্রহন করা যাবে । কারণ ঔষধের মধ্যে বিভিন্ন দ্রব্যাদির মিশ্রণ থাকাটা স্বাভাবিক ।

যেহেতু মূল শ্লোকের মধ্যে " ঔষধম্" শব্দটি রয়েছে,তাই যে দ্রব্য দিয়েই তৈরি হোক না কেন, যদি তা রোগ সারানোর ঔষধ হয় তবে উপবাসে তা গ্রহনে কোন বাধা থাকতে পারে না ।

আরো জানুনঃ জন্মাষ্টমী ব্রত কিভাবে পালন করবেন । জানুন নিয়মাবলী

একাদশীতে কি সাবু খাওয়া যায় ?

একাদশী তিথির মধ্যে- চাল, গম, তৈল, যব ও ভুট্টা এই পাঁচ প্রকার শস্য থেকে প্রস্তুত কোনো প্রকার খাবার খাওয়া নিষেধ। একাদশী তিথির দৈর্ঘ্য সাধারণত ২৬/২৭ ঘন্টা । এই দীর্ঘ সময় কেউ যদি না খেয়ে থাকে, তাহলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং তার প্রতিদিনের জীবনযাত্রার কার্যক্রম ব্যাহত হবে । সেজন্য একাদশী তিথির মধ্যে একবার যেকোনো ফল, জল এবং দুধ খাবার বিধান আছে, এই সময় সাবুও খাওয়া যায় একারণে যে- সাবু উপরে উল্লেখ করা পাঁচ প্রকার শস্যের মধ্যে পড়ে না ।

সাবু একটি গাছের গুড়ার ফল থেকে তৈরি । ব্যাপারটি কাছাকাছি হলেও কিছুটা ভিন্ন । সাবু, পাম গাছের কাণ্ডের ভেতরের নরম অংশ থেকে তৈরি করা হয় । সাবুতে শর্করা, আমিষ, খনিজ লবন এবং বিভিন্ন রকম ভিটামিন আছে, এটি খুবই সহজপাচ্য বলে সাধারণত শিশু এবং রোগীদেরকে খাওয়ানো হয় ।


একাদশীতে কি জল খাওয়া যায় ?

হ্যা, তবে যারা নির্জলা একাদশী পালন করবেন তারা জলপান করতে পারবেন না । তবে যারা শিশু, তারা পঞ্চ রবিশস্য বাদে সকল ফলমূল এবং জলপান করতে পারেন । তবে সেটা দুপুরের পরে হলে ভালো হয় ।

একাদশীতে কি সিগারেট খাওয়া যায় ?

যারা সাত্ত্বিক আহারী নন এবং চা, বিড়িসিগারেট পান কফি ইত্যাদি নেশা জাতীয় গ্রহণ করেন, একাদশী ব্রত পালনের সময়কাল পর্যন্ত এগুলি গ্রহণ করা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ । শাস্ত্রে এমনিতেই মাদকদ্রব্য গ্রহণকে পাপ বলা হয়েছে । আর এই পাপ যদি আপনি একাদশীর দিন করেন । তাহলে তার ক্ষমা আপনি কোনদিনও পাবেন না । সুতরাং সাবধান । একাদশীর দিন কোন মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা যাবে না ।

একাদশীর পারন মন্ত্র

"একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।”

এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে পারন করতে হয় । 


একাদশী সংকল্প মন্ত্র

"একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্হিত্বা অহম্ অপরেহহনি।
ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনং মে ভবাচ্যুত।।"

অনুবাদ: হে পুন্ডরীকাক্ষ হে অচ্যূত আমি একাদশীর দিন উপবাস পূর্বক এই ব্রত পালন করার জন্য আপনার স্মরণ গ্রহণ করছি ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

4 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top