বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য

0
বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য

আগামী ২৭ শে ফেব্রুয়ারী রোজ রবিবার বিজয়া একাদশী । চলুন আজকে জেনে নিই এই একাদশীর মাহাত্ম্য ।

আর্টিকেলটি 'একাদশী মাহাত্ম্য' পুস্তক থেকে নেওয়া হয়েছে ।

বিজয়া একাদশীর মাহাত্ম্য

স্কন্দপুরাণে এই একাদশীর মাহাত্ম্য খুবই সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে । মহারাজ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন-হে বাসুদেব! ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর মাহাত্ম্য অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন ।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন—হে যুধিষ্ঠির! এই একাদশী ‘বিজয়া’ নামে পরিচিত । এই একাদশী সম্পর্কে একসময় দেবর্ষি নারদ স্বয়ম্ভু ব্রহ্মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন । তিনি এই প্রসঙ্গে যা বলেছিলেন, তা আমি এখন তােমাকে বলছি । এই পবিত্র পাপবিনাশকারী ব্রত মানুষকে জয় দান করে বলে ‘বিজয়া’ নামে প্রসিদ্ধ ।

পুরাকালে শ্রীরামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের জন্য বনে গিয়েছিলেন । সীতা ও লক্ষ্মণের সঙ্গে তিনি পঞ্চবটী বনে বাস করতেন । সেই সময় লঙ্কাপতি রাবণ দেবী সীতাকে হরণ করে । সীতার অনুসন্ধানে রামচন্দ্র চতুর্দিক ভ্রমণ করতে থাকেন । তখন মৃতপ্রায় জটায়ুর সাথে তার সাক্ষাৎ হয় । জটায়ু রারণের সীতাহরণের সমস্ত বৃত্তান্ত রামচন্দ্রকে জানিয়ে মৃত্যুবরণ করে । এরপর সীতা উদ্ধারের জন্য বানররাজ সুগ্রীবের সাথে তিনি বন্ধুত্ব স্থাপন করেন ।

ভগবান রামচন্দ্রের কৃপায় হনুমান লঙ্কায় গমন করেন । সেখানে অশােক বনে সীতাদেবীকে দর্শন করে শ্রীরাম প্রদত্ত অঙ্গুরীয় (আংটি) তাকে অর্পণ করেন । ফিরে এসে শ্রীরামচন্দ্রের কাছে লঙ্কার সমস্ত ঘটনার কথা ব্যক্ত করেন । হনুমানের কথা শুনে রামচন্দ্র সুগ্রীবের পরামর্শে সমুদ্রতীরে যান । সেই দুস্তর সমুদ্র দেখে তিনি লক্ষ্মণকে বললেন—“হে লক্ষ্মণ! কিভাবে এই অগাধ সমুদ্র পার হওয়া যায় । তার কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না ।'

উত্তরে লক্ষ্মণ বললেন-হে পুরুষােত্তম! সর্বজ্ঞাতা আদিদেব আপনি, আপনাকে আমি কি উপদেশ দেব ? তবে বাকদালভ্য নামে এক মুনি এই দ্বীপে বাস করেন । এখান থেকে চার মাইল দূরে তার আশ্রম । হে রাঘব, আপনি সেই প্রাচীন ঋষিশ্রেষ্ঠকে এর উত্তর জিজ্ঞাসা করুন । লক্ষ্মণের মনােরম কথা শুনে, তারা সেই মহামুনির আশ্রমে উপনীত হলেন । ভগবান রামচন্দ্র ভক্তরাজ সেই মুটিকে প্রণাম করলেন । মুনিবর রামচন্দ্রকে পুরাণপুরুষ বলে জানতে পারলেন । আনন্দভরে জিজ্ঞাসা করলেন—হে রামচন্দ্র! কি কারণে আপনি আমার কাছে এসেছেন, তা কৃপা করে বলুন ।

শ্রীরামচন্দ্র বললেন-হে মুনিবর! আপনার কৃপায় সৈন্যসহ আমি এই সমুদ্র তীরে উপস্থিত হয়েছি । রাক্ষসরাজের লঙ্কা বিজয় করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য । যাতে এই ভয়ঙ্কর সমুদ্র উত্তীর্ণ হতে পারি তার উপায় জানবার জন্য আমরা আপনার কৃপা প্রার্থনা করি । মুনিবর প্রসন্নচিত্তে পদ্মলােচন ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকে বললেন—“হে রাম । আপনার অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য যে শ্রেষ্ঠ ব্রত করণীয় আমি তা বলছি । ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের ‘বিজয়া’ নামক একাদশী ব্রতপালনে আপনি নিশ্চয়ই সৈন্যসহ সমুদ্র পার হতে পারবেন। এই ব্রতের বিধি শ্রবণ করুন । বিজয় লাভের জন্য দশমীর দিন সােনা, রূপা, তামা অথবা মাটির কলস সংগ্রহ করে তাতে জল ও আমপাতা দিয়ে সুগন্ধি চন্দনে সাজিয়ে তার উপর সােনার নারায়ণমূর্তি স্থাপন করবেন । একাদশীর দিন যথাবিধি প্রাতঃস্নান করে কলসের গলায় মালা চন্দন পড়িয়ে উপযুক্ত স্থানে নারকেল ও গুবাক দিয়ে পূজা করবেন । এরপর গন্ধ, পুষ্প, তুলসী, ধূপ-দ্বীপ নৈবেদ্য ইত্যাদি দিয়ে পরম ভক্তিসহকারে নারায়ণের পূজা করে হরিকথা কীর্তনে সমস্ত দিন যাপন করবেন । রাত্রি জাগরণ করে অখণ্ড ঘি-প্রদীপ প্রজ্বলিত রাখবেন । দ্বাদশীর দিন সূর্যোদয়ের পর সেই কলস বিসর্জনের জন্য কোন নদী, সরােবর বা জলাশয়ের কাছে গিয়ে বিধি অনুসারে পূজা নিবেদনের পরে তা বিসর্জন দেবেন । তারপর ঐ মূর্তি বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে দান করবেন । এই ব্রত প্রভাবে নিশ্চয়ই আপনার বিজয় লাভ হবে ।

ব্রহ্মা বললেন—হে নারদ! ঋষির কথামতাে ব্রত অনুষ্ঠানের ফলে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন । সীতাপ্রাপ্তি, লঙ্কাজয়, রাবণবধের মাধ্যমে শ্রীরামচন্দ্র অতুল কীর্তি লাভ করেছিলেন । তাই যথাবিধি যে মানুষ এই ব্রত পালন করবেন তাদের এজগতে জয়লাভ এবং পরজগতে অক্ষয় সুখ সুনিশ্চিত জানবে ।

হে যুধিষ্ঠির! এই কারণে এই বিজয়া একাদশী ব্রত পালন অবশ্য কর্তব্য । এই ব্রতকথার শ্রবণকীর্তন মাত্রেই বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয় ।


আরও পড়ুন :

দ্রৌপদীর পঞ্চ স্বামী হওয়ার কারণ কি ছিল ?

মহাভারতের রচনাকাল

অবতার শব্দের অর্থ কি ? অবতার কাকে বলে ? অবতার নিয়ে বিস্তারিত

হিন্দুধর্মের সবচেয়ে শক্তিশালী ৮ জন দেবতা

রামায়ণের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০ জন যোদ্ধা

প্রাচীনকালে হিন্দু ঋষি ও ব্রাহ্মণরা কি মাংস খেতেন ?

হিন্দু ধর্ম মতে মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী ?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top