দ্রৌপদীর পঞ্চ স্বামী হওয়ার কারণ কি ছিল ?

0
দ্রৌপদীর পঞ্চ স্বামী হওয়ার কারণ কি ছিল ?

দ্রৌপদী যজ্ঞ থেকে উৎপন্ন বলে তার অযোনী সম্ভবা এবং নাম যাজ্ঞসেনী । মহারাজ দ্রুপদ এক যজ্ঞ করেছিলেন সন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষায় । সেই যজ্ঞ থেকে তার এক পুত্র এবং এক কন্যা লাভ হয় । পুত্রের নাম হলো যজ্ঞসেন । যজ্ঞসেন এবং যাজ্ঞসেনী দুজনেই মহারাজ দ্রুপদের পুত্র এবং কন্যারূপে লালিত পালিত হতে থাকল । কিন্তু নামকরণের পরিবর্তন হলো ইতিমধ্যে দুজনেরই । পুত্রের নাম হলো ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কন্যার নাম হলো দ্রৌপদী । তখনকার দিনে দেশের নাম এবং পিতার নামের সাথে সঙ্গতি রেখে কন্যার নামকরণ করা হতো অনেকক্ষেত্রেই । দ্রুপদ রাজার কন্যা বলে নাম ছিল দ্রৌপদী, পাঞ্চাল দেশের নামানুকরণে পাঞ্চালী । এমনি কুন্তিভোজ রাজার কন্যা বলে পান্ডবদের মায়ের নাম ছিল কুন্তি । আবার গান্ধার দেশের কন্যা বলে কৌরবাদির গান্ধারী এবং মদ্র দেশের কন্যা বলে নকুল-সহদেবের মায়ের নাম ছিল মাদ্রী । এমন অনেক উদাহরণ আছে ।

দ্রৌপদীর পঞ্চ স্বামী কেন হলো ?

দ্রৌপদী বিবাহযোগ্যা হলে দ্রুপদ স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করলেন এবং শর্ত দিলেন, যে নিচে জলের দিকে তাকিয়ে উপরে রক্ষিত ঘূর্ণায়মান চক্রের মধ্য দিয়ে মাছের চোখ বিদ্ধ করতে পারবে সে দ্রৌপদীকে লাভ করবে । এই পরীক্ষায় জয়লাভ করলেন অর্জুন । দ্রৌপদীকে নিয়ে পঞ্চপাণ্ডব যখন বাড়িতে এসে কুন্তিকে বললেন যে আজ ভিক্ষায় একটি অপূর্ব জিনিস পেয়েছি তখন তিনি (কুন্তি) বললেন – যা পেয়েছ পাঁচ ভাই ভাগ করে ভোগ কর । এ কি করে সম্ভব ? একটি মেয়েকে পাঁচজনে কি করে বিবাহ করবেন ? সংবাদটি দ্রুপদ এবং ধৃষ্টদ্যুম্নের কাছে গেল । তারা একমত হলেন যে এই বিবাহ অধর্ম । তাই বিকল্প চিন্তা করলেন । এমন সময় মহর্ষি ব্যাসদেব সেখানে উপস্থিত হলেন । তাকে দেখে সকলেই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন এবং এ সমস্যা থেকে কিভাবে উত্তরণ সম্ভব তা জানতে চাইলেন ।

ব্যাসদেব বললেন– দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামীই হবে ! এটা দৈবের লিখন । তার পূর্বিজন্মের কাহিনী শুনলেই আপনারা সব বুঝতে পারবেন । কোন এক তপোবনে এক মহর্ষির কন্যা বাস করতেন । তার বিবাহকাল অতীত হলেও ভর্ত্তৃভাগিনী হলেন না । এরপর তিনি কঠোর তপস্যায় ভগবান শিবকে প্রসন্ন করলেন । মহাদেব তার প্রতি প্রীত হয়ে বললেন, তুমি তোমার অনভিলষিত বর প্রার্থনা কর । কন্যা মহাদেব কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে পাঁচ বার বললেন– আমি সর্বগুণ সম্পন্ন বর (স্বামী) প্রার্থনা করি । ব্যাসদেব বললেন, ভগবান শিব প্রার্থনা অনুসারে তার পাঁচজন স্বামী বিধান করেছেন । দৈবসংযোগ যদি না হয় তাহলে কি ধরণী হতে এরূপ অসামান্য স্ত্রীরত্ন সমুৎপন্ন হতে পারে ?

যুধিষ্ঠির বললেন– আমি পুরাণে শুনেছি যে, ধর্মপরায়ণা এক জটিলা নাম্নী গৌতম বংশীয় এক কন্যা সনাতন ঋষিকে বিবাহ করেছিলেন । বার্ক্ষি নাম্নী এক মুনিকন্যা প্রচেতা নামক দশ ভাইকে বিবাহ করেছিলেন । পন্ডিতেরা বলেন গুরুজন যা বলেন তাই ধর্ম এবং তা অনুষ্ঠেয় । মাতা পরম গুরু, তার বাক্য পালন করা ধর্ম বলে আমার মনে হয় ।

বেদব্যাস মহারাজ দ্রুপদকে বললেন– আমি আপনাকে   দিব্যচক্ষু প্রদান করছি । আপনি সে দিব্যচক্ষু দ্বারা পান্ডবদের জন্মবৃত্তান্ত জানতে পারবেন । রাজা তখন দেখলেন ভূতপূর্ব ইন্দ্রগণ দিব্যাভরণ ভূষিত হয়ে বিচরণ করছে । রাজা ইন্দ্রগণকে দেখে বিস্মিত হলেন এবং দ্রৌপদীকে বহ্নির ন্যায় দীপ্তিময়ী দেখে পরিতৃপ্ত হলেন ।

দেবাদিদেব মহাদেবকে অবমাননা করায় পূর্ব পূর্ব ইন্দ্রগণ মানব গর্ভে জন্ম নেবেন এমত বিহিত হওয়ায় ইন্দ্রগণের প্রার্থনায় ধর্ম, বায়ু, ইন্দ্র, অশ্বিনী কুমারদ্বয়ের যেন জন্ম হয় তা দেবেশ আদেশ করেন ।

উপরিউক্ত বর্ণনায় এটুকু যুক্ত করা যায় যে পঞ্চপাণ্ডব ইন্দ্র কর্তৃক আশীর্বাদপুষ্ট এবং দ্রৌপদী শুধুমাত্র ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরেরই পত্নী ছিলেন । অন্য চার পান্ডব পুনর্বার এক বা একাধিক বিবাহ করেছেন । একমাত্র যুধিষ্ঠিরই দ্রৌপদী ভিন্ন অন্য কোন নারীর পাণিগ্রহণ করেন নি । দ্রৌপদীর বিবাহ শুধুমাত্র গুরুবাক্য পালনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে ।


আরও পড়ুন  :

মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে ছিলেন ?

মহাভারত বাংলায় অনুবাদ করেন কে ?

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্পূর্ণ জীবনী

অশৌচ কি ? কত প্রকার ?

হিন্দুরা কেন মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলে ?

আদ্যশ্রাদ্ধ কি এবং কেন করণীয় ?

মহাভারতের রচয়িতা কে ছিলেন ?

জনার দেশপ্রেমের উপাখ্যান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top